Home > স্বাস্থ্য > লিভার ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে কফি

লিভার ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে কফি

কফি পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে। ক্লান্তি দূর করতে কিংবা আড্ডা জমাতে কফির বিকল্প নেই। জনপ্রিয় পানীয়গুলোর মধ্যে কফি অন্যতম।

দেখা গেছে, যে ব্যক্তি প্রত্যহ কফি পান করেন তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাচ্ছেন। তাহলে চলুন জেনে আসি কফির বিস্ময়কর দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

১. কফি হতাশা দূর করে। হেলথলাইন ডট কম এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনে ৪ কাপ বা তার অধিক কফি খাবে তার রোজকার জীবনের হতাশা অধিকাংশ কমে যাবে। ৪ কাপ কফি একজন কফি পানকারীর ২০ শতাংশ হতাশা কমিয়ে আনতে পারে। এমনকি কফি পানের মাধ্যমে ৫৩ শতাংশ আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব।

২. যকৃত সুস্থ রাখে কফি। কফি পানের মাধ্যমে লিভার সিরোসিস এর ঝুকি ২২ শতাংশ কমে আসে। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি, কফির কিছু উপাদান লিভারকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। যেখানে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে লিভার সিরোসিস এর মত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে ক্যাফেইনবিহীন কফি লিভারের এঞ্জাইমের মাত্রা কমিয়ে আনে।

৩.
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ। আপনি জানলে অবাক হবেন, আমেরিকানরা শুধুমাত্র কফি থেকেই তাদের দেহের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করে থাকে। গবেষণা মতে, কফির থেকে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর কোনো উৎস থেকে পাওয়া সম্ভব না।

কাফেইন যুক্ত বা কাফেইন বিহীন কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কোন তারতম্য ঘটে না। কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয় যখন কফি বীজ রোস্ট করা হয়। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কুইনাইন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। এই কারণেই আমেরিকানরা বেশি পরিমান কফি পান করেন।

৪. কফি ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। হার্ভার্ডের একজন পুষ্টিবিদ নয়টি ভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে টাইপ-২ ডাইবেটিক এর সঙ্গে কফির সম্পর্ক খুঁজে পান। যেখানে দেখা যায় যারা কফি পান করে না তাদের থেকে কফি সেবনকারীদের টাইপ-২ ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ কম।

তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ার আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে এক কাপ কফি পান করলে মানুষের টাইপ-২ ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৭ শতাংশ কমতে পারে। এছাড়াও আরও ১৫ টি গবেষণায় পাওয়া গেছে কফি ডায়বেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

৫. যারা মানুষের লিভার সক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাদের দিনে দুই অথবা অধিক কাপ কফি খাওয়া উচিত। কফি তাদের লিভার সংক্রান্ত রোগের ঝুকি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। ইতালির কিছু গবেষক এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, কফি লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। যারা দিনে ৩ কাপ বা তার বেশি কফি পান করেন তাদের লিভার কেন্সারে ঝুকি ৫০ শতাংশ কমতে পারে।

৬. কফি ভিটামিনের একটি বিরাট উৎস। কিছু মানুষ প্রত্যহ ভিটামিন সেবন খুবই অপছন্দ করেন। তবে কফি পানকারীরা তাদের কফি কাপ থেকে প্রতিদিন কিছু অতিরিক্ত পুষ্টিগুণ পান।

এক কাপ কফিতে থাকে- ভিটামিন বি-৫; ৬ শতাংশ, ভিটামিন বি-২; ১১ শতাংশ, ভিটামিন বি-৩ এবং বি-১; ২ শতাংশ, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম; ৩ শতাংশ, নিয়াসিন ও ম্যাগনেসিয়াম; ২ শতাংশ।

৭. কফি আপনাকে ব্যায়াম করার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা যোগান দেয়। যে ব্যক্তি ব্যায়ামের আগে ক্যাফেইন সেবন করবে তার কর্মক্ষমতা ১১ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

৮. কফি দেহের বাড়তি চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ক্যাফেইন যুক্ত কফি যেমন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেমনি দেহের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। কফি খেলে দেহের বৃক্ক রস এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কফি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দিপনার জোগান দেয় যা কিনা আমাদের দেহে চর্বি পোড়ানোর সংকেত পাঠায়। যার ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৯. কফি আপনাকে বুদ্ধিমান হিসেবে তৈরি করে। যারা তাদের মস্তিষ্কের শক্তি, প্রতিভা বাড়াতে চায় তাদের অবশ্যই সকালে এক কাপ কফি পান করা উচিত। কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এডিনোসাইনোকে বাধা দেয়। যা কিনা একটি নিবারক নিউরো ট্রান্সমিটার। এছাড়াও কফি দেহের নরপ্রাইনফাইন এবং ডোপামিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে যা খুবই শক্তিশালী নিউরোট্রান্সমিটার।

১০. দীর্ঘায়ু পেতে কে চায় না? কফি একজন মানুষের দীর্ঘায়ু পেতে সাহায্য করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দৈনিক তিন থেকে চার কাপ কফি পান করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবনকাল ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছারাও অন্যান্য পানীয় থেকে কফি মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।