বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি দলের পদ প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদবি থেকে পদত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার রাতে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া বরাবরে পদত্যাগ পত্রটি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে পাঠিয়ে দেন।
বিএনপি থেকে পদত্যাগের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে রাতে সাংবাদিকদের মোরশেদ খান জানান, ব্যক্তিগত কারণেই বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান বলেন, মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সে ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।
তিনি লিখেন, রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণ হেতু আমার উপলব্ধি-সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে ‘অলঙ্কৃত’ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
চিঠিতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য নেতাকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত এবং অনেকেই বর্তমানে দলের হাল ধরে আছেন। প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি যেমন কামনা করি, তেমনি আপনিসহ বর্তমান সবকর্মী নেতাদেরও আমি মঙ্গলাকাঙ্খী। অতীত ও বর্তমান সব কর্মীর নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য, সখ্য, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং দলের কর্মী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিএনপি আমাকে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে।
যে কারণে পদত্যাগ:
ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও মূলত অবমূল্যায়নে অভি মান করে ক্ষোভে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অবজ্ঞা, মনোনয়ন না দেয়া এবং চট্টগ্রাম ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অবমূল্যায়ন ও কোণঠাসা করে রাখার কারণেই দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিলচ্ছুক মোরশেদ খানের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ত্যাগী ও জনপ্রিয় এ নেতা মোরশেদ খানকে গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ চট্টগ্রামের রাজনীতির এখনকার ‘হর্তাকর্তা’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতার কারণে তিনি মনোনয়ন পাননি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিএনপিতে মোরশেদ খানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেননি। এ যন্ত্রণা তাকে অনেক ভুগিয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তার অনুসারীদেরও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তার অনুসারীদের পদ-পদবি নেই, থাকলেও যোগ্যতার তুলনায় তা কিছুই নয়। আর এসব বঞ্চনা অবহেলার বিষয়টি কারাবন্দি দলের চেয়ারপার্সনকে না পেরেছেন বুঝাতে, না পারছেন সইতেব। অবশেষে এসব ক্ষোভ থেকে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।