Home > শিক্ষা > বাড়িতে বাবার লাশ, হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দিলো ছেলে

বাড়িতে বাবার লাশ, হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দিলো ছেলে

বাবাকে দোকান থেকে কলম আনতে বলেছিল জেএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে। আর ছেলের জন্য কলম আনতে গিয়ে বেপরোয়া গতির একটি মোটরসাইকেলের চাপায় লাশ হলেন বাবা।

সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম মো. ইসলাম মিয়া (৪৫)। তিনি ওই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে এবং স্থানীয় বাজারের লেপ-তোষকের ব্যবসায়ী।

এদিকে বাবার মৃত্যুর সংবাদে জেএসসি পরীক্ষার্থী নাফিল (১৪) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে কিছুতেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে রাজি নয় সে। এমন সংবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দ্রুত নাফিলকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের কেবিনেই পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে নাফিল আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সোমবার তার ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। সকাল ৮টার দিকে সে তার বাবাকে দোকান থেকে কলম কিনে আনতে বলে। ছেলের জন্য কলম কিনে বাসায় ফেরার পথে বাড়ির সামনের রাস্তায় বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হন ইসলাম মিয়া।

বাবার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়ে নাফিল। কান্নাকাটি করতে করতে কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল সে। এদিকে পরীক্ষার সময় চলে হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় নাফিল। এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মর্মান্তিক এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে নাফিলের বাসায় ছুটে যান আড়াহাইহাজার উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ হোসেন। এ সময় তিনি নাফিলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। পরে নাফিলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসার পর সে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। পরে হাসপাতালের কেবিনে তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ইউএনও সোহাগ হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে দ্রুত নাফিলের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে শান্তনা দেয়া হয়। অসুস্থ নাফিলকে হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানে তাকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একজন শিক্ষক ও পুলিশ পরীক্ষার গার্ড দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, নাফিল তার বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে। তার লেখাপড়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন নেবে। স্কুলে সে ফ্রি লেখাপড়া করবে।

নাফিলের বাবাকে চাপা দেয়া সেই মোটরসাইকেলের চালক রাসেলকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।