ঈমানের অপরিহার্য এক অঙ্গ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। আল্লাহ ছাড়া এমন কোনো কিছু নেই যাকে সর্বদিক দিয়ে ভালোবাসা যায়। ঈমানের স্বাদ ও তৃপ্তি মানুষ যতটুকু অনুভব করবে, সে অনুপাতে আল্লাহর প্রতি তার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
ভালোবাসা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন ভাগে একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুমিনদের ভালোবাসা সম্পর্কে ১৪ আয়াত, কাফেরদের ভালোবাসা সম্পর্কে ১২ আয়াত, আল্লাহ ভালোবাসেন না যা সে প্রসঙ্গে ১৫ আয়াত, আল্লাহ যা ভালোবাসেন ওই প্রসঙ্গে ৯ আয়াত, ভুল করে ভালোবাসা সম্পর্কে ৩ আয়াত, ভালোবাসার অসার দাবি সম্পর্কে ১ আয়াত আর ভালোবাসার অন্যান্য প্রসঙ্গে রয়েছে আরো কয়েকটি আয়াত।
ওইসব আয়াত থেকে আল্লাহ ভালোবাসেন, আল্লাহ অপছন্দ করেন, বান্দার কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করেন এমন কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো—
১. ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকাজ করো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালোবাসেন।’ সুরা বাকারা : ১৯৫
২. ‘আল্লাহ ও তার রসুলের নিকট মুশরিকদের চুক্তি কি করে বলবৎ থাকবে? তবে যাদের সঙ্গে মসজিদুল হারামের সন্নিকটে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে, তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের পছন্দ করেন।’ সুরা তাওবা : ৭
৩. ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত। তারা যদি তোমার নিকট আসে তবে তাদেরকে বিচার নিষ্পত্তি করো না, অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করো না। তুমি যদি তাদেরকে উপেক্ষা করো তবে তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি করো তবে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করো; নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ সুরা মায়েদা : ৪২
৪. ‘বলো! তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা আলে ইমরান : ৩১
৫. ‘নারী, সম্মান, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ, তার নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল।’ সুরা আলে ইমরান : ১৪
৬. ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আল্লাহ অবশ্যই সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ সুরা আলে ইমরান : ৯২
৭. ‘না, তোমরা প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনকে ভালোবাসো এবং আখেরাতকে উপেক্ষা করো।’ সুরা কিয়ামাত : ২০-২১
৮. ‘তুমি যাকে ভালোবাসো ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসারীদের।’ সুরা কাসাস : ৫৬
৯. ‘তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হলো— যদিও তোমাদের নিকট এটা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ করো সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালোবাসো সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।’ সুরা আল বাকারা : ২১৬
১০. ‘আল্লাহ বিশৃঙ্খলাকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা মায়িদা : ৬৪
১১. ‘আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা বাকারা : ১৯০
১২. ‘আল্লাহ অবিশ্বাসী পাপীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা বাকারা : ২৭৬
১৩. ‘আল্লাহ অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ সুরা আলে ইমরান : ৩২
১৪. ‘আল্লাহ জালেমদের (অত্যাচারী) ভালোবাসেন না।’ সুরা আলে ইমরান : ৫৭
১৫. ‘আল্লাহ গর্বকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা নিসা : ৩৬
১৬. ‘আল্লাহ গর্বিত উৎফুল্লকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা কাসাস : ৭৬
১৭. ‘আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা আন নাহল : ২৩
১৮. ‘আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা আনআম : ১৪১
১৯. ‘আল্লাহ আমানতের খেয়ানতকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা আনফাল : ৫৮
২০. ‘আল্লাহ খেয়ানতকারী পাপীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা আন নিসা : ১০৭
২১. আল্লাহ কথায় (ভাষায়) মন্দ প্রকাশ করা ভালোবাসেন না।’ সুরা আর নিসা : ১৪৮
২২. ‘আল্লাহ খেয়ানতকারী কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ সুরা হজ : ৩৮
২৩. ‘আল্লাহ ফাসাদ-বিপর্যয় ভালোবাসেন না।’ সুরা বাকারা : ২০৫
২৪. ‘ঈমান ভালোবাসার বীজ।’ সুরা ইয়াসিন : ৩৩
২৫. ‘আমি (আল্লাহ) তার মাঝে ভালোবাসা দিয়েছি।’ সুরা ত্বহা : ৩৯
২৬. ‘আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ সুরা বাকারা : ১৯৫
২৭. ‘আল্লাহ পবিত্রদের ভালোবাসেন।’ সুরা তাওবা : ১০৮
২৮. ‘আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা আল বাকারা : ২২২
২৯. ‘আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ সুরা আল ইমরান : ৭৬
৩০. ‘আল্লাহ ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ সুরা আল ইমরান : ১৪৬
৩১, ‘আল্লাহ (তার ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা আল ইমরান : ১৫৯
৩২. ‘আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’ সুরা মায়িদা : ৪২
৩৩. ‘আল্লাহ মুজাহিদদের ভালোবাসেন।’ সুরা ছফ : ৪
৩৪. ‘মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো।’ সুরা হুজরাত : ১২
৩৫. ‘মানুষ অবশ্যই তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে অবশ্যই এ বিষয়ে অবহিত এবং সে অবশ্যই ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল।’ সুরা আদিয়াত : ৬-৮