প্রথম স্বামীর ঘর ছেড়ে ভালবেসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রহিমা। পরে এ ঘরও ছাড়েন তিনি। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পালিয়ে যান আরেক প্রেমিকের সঙ্গে। যাওয়ার পর পিতাকে বাদী সাজিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন রহিমা। স্বামী বেচারা পাল্টা মামলা করায় জামাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক গায়েবি মামলা করছেন শ্বশুর। ঘটনাটি ঘটেছে খুলনার রূপসা উপজেলার চর রূপসা গ্রামে।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, চর রূপসা রবের মোড়ের কাছে মুছা হাওলাদারের ভাড়াটিয়া ও মো. মোফাজ্জল হেসেনের ছেলে মো. ইমাম হাসান সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজে বিবিএ (অনার্স) লেখাপড়ার পাশাপাশি মাছ কোম্পানীতে কাজ করছেন। তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ২০ জুলাই প্রেম করে বিয়ে করেন চর রূপসা গ্রামের আমিনুল ইসলামের কলেজ পড়ুয়া কন্যা রহিমা খানমকে (২১)।
বিয়ের পর ইমাম হাসানের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে থাকে এই নব দম্পত্তি। এর কয়েক দিন পর ইমাম জানতে পারে আরো ২ বছর আগে (২মে’১৪ তারিখ) পারিবারিকভাবে নঁওগা জেলার কমলপুর এলাকার ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন রাকিবের সাথে ১৬ বছর ৫ মাস বয়সে বিয়ে হয় রহিমার। প্রথম স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ভেঙে যায় ওই সংসার। অতীতের সব কিছু ভুলে রহিমাকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন ইমাম। এদিকে স্বামীর সংসারে নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে রহিমা সরকারি সুন্দরবন কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত।
জানা গেছে, দ্বিতীয় স্বামীর সংসার করা অবস্থায় একই এলাকার মাজেদ ডাক্তারের ভাড়াটিয়া জনৈক ইমরানের সাথে তার পরকীয়া গড়ে ওঠে রহিমার। পরকীয়া থেকে চলতে থাকে অনৈতিকতা। একপর্যায়ে গত ১৮জুন ইমরানের সাথে রহিমাকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতে নাতে ধরে স্বামী ইমাম। পরদিন ১৯ জুন কলেজে যাওয়ার কথা বলে রহিমা প্রেমিক ইমরানের সাথে পালিয়ে যায়। এদিকে স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর সম্ভাব্য নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২২ জুন রূপসা থানায় জিডি করার পাশাপাশি ও পত্রিকায় ছবিসহ হারানো বিজ্ঞপ্তি দেয় ইমাম।
এদিকে বেশ কয়েকদিন প্রেমিকের সাথে বিভিন্ন স্থানে থেকে লোকলজ্জায় স্বামীর সংসারে না ফিরে পিত্রালয়ে গিয়ে ওঠে বহু পুরুষভোগী রহিমা। মেয়েকে হাতে পেয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে জামাই ইমামের বিরুদ্ধে গত ৮জুলাই খুলনার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-২ আদালতে মামলা দায়ের করেন শ্বশুর আমিনুল। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই’তে তদন্তধীন রয়েছে।
অপরদিকে ইমাম হাসান কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে গত ৭ আগস্ট ইমরান ও স্ত্রী রহিমাকে আসামি করে খুলনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত “ক” অঞ্চল এ মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ইমরানের স্ত্রী কেয়া বেগমের মাধ্যমে রহিমা ও ইমরানের বিশেষ মুহূর্তের সাত কপি আপত্তিকর ছবি সংযুক্ত করে বলে মামলা সূত্রে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ইমাম হাসান জানায়, আমার শ্বশুর আমিনুল ও মামা শ্বশুর হাসান বিহারী আমাকে শায়েস্তা করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমার সংসারে থাকা অবস্থায় কখনো তার মেয়েকে কটু কথা পর্যন্ত বলিনি। তারপরও সে আমার সাথে প্রতারণা করে অন্য ছেলের সাথে চলে গেলো। আর সেই মেয়ের অপরাধ না দেখে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা করাচ্ছেন। এমনকি পিরোজপুরেও আমাকে আসামি করে একটা মামলা করেছে। মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছেন। সামনে আমার বিবিএ অনার্স পরীক্ষা। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে না পারছি লেখাপড়া করতে, না পারছি চাকরি করতে।
ইমামের বাড়িওয়ালা মুসা হাওলাদারের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ইমামকে আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি। খুব ঠান্ডা স্বভাবের। পাশাপাশি ওর বিবাহিত ৩ বছরের মধ্যে স্ত্রীর সাথে কখনো ঝগড়া বিবাদ দেখিনি। কিন্তু বউটা কিসের মোহে ওই ইমরানের সাথে চলে গেলো বুঝলাম না।
প্রতিবেশী অপর বাড়িওয়ালা মো. নুরুল হক, প্রতিবেশী সবুজ খা, সোহেল শেখ ও কাকলি বেগম বলেন, ইমাম ও রহিমার বিয়ে ও সংসার চলছে তিন বছর। এখন তিন বছর পর ওর শ্বশুর মেয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যা খুবই জঘন্য একটা কাজ। তারা বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।