কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত হতে পারেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৩৭ কাউন্সিলর। নৈতিক স্খলন ও স্থানীয় সরকার আইন অমান্য করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে এসব কাউন্সিলর সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ৩৫ জনকে এরই মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্য দু’জনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তারা হলেন- ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান মিজান ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তারেকুজ্জামান রাজীব। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়। তাদের তিনজনের বিরুদ্ধেই ক্যাসিনো সংশ্নিষ্টতাসহ অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। সাঈদ বর্তমানে পলাতক। রাজীব ও মিজান কারাগারে। অন্য কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের বোর্ডসভায় অনুপস্থিত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এর ১৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত বা পূর্বানুমতি না নিয়ে সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে কাউন্সিলর পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন বা অপসারিত হবেন। ডিএসসিসির ২১ জন কাউন্সিলর টানা তিনটি বোর্ডসভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের ইতোমধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরও রয়েছেন। তাদেরকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদেরও কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করা হবে।
ডিএসসিসির সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, ২৭ অক্টোবর তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, কাউন্সিলররা নির্বাচিত হওয়ার পর ২০টি বোর্ডসভা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ১৫টি সভাতেই অনুপস্থিত ছিলেন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান ছিলেন না ১৪টি সভায়। ১২টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম আশরাফ তালুকদার এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তবা জামান। ১১টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তারিকুল ইসলাম সজীব এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল শাহ।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাফুজ্জামান ১০টি সভায় অংশ নেননি। এ ছাড়া ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফ হোসেন নয়টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম রাসেল এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জসীম উদ্দিন আহমেদ আটটি করে সভায় উপস্থিত ছিলেন না। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম হোসেন, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন টিপু ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সারোয়ার হাসান আলো ছয়টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বাসিত খান ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নাছিম মিয়া পাঁচটি সভায় এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আউয়াল হোসেন চারটি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ১৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন মনি ১২টি এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিউলী হোসেন নয়টি সভায় অংশ নেননি। তাদের প্রত্যেককেই কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ডিএনসিসির টানা তিনটি সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকা ১৪ কাউন্সিলরকে গত বৃহস্পতিবার কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়। তারা হলেন- বেগম মেহেরুন্নেসা হক, খালেদা বাহার বিউটি, আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ইলোরা পারভীন, কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, আবদুর রউফ, রজ্জব হোসেন, নাছির, শেখ মুজিবুর রহমান, শামীম হাসান, নুরুল ইসলাম রতন, শফিকুল ইসলাম, তৈমুর রেজা ও মোতালেব মিয়া। সূত্র: সমকাল