জ্ঞান হচ্ছে আলো আর অজ্ঞতা হচ্ছে অন্ধকার। জ্ঞানের প্রধান উৎস হচ্ছে কুরআন এবং সুন্নাহ। আর অজ্ঞতার প্রধান উৎস হচ্ছে গোনাহ। যে অন্তরে গোনাহ থাকে সেখানে কুরআন-সুন্নাহর আলো প্রবেশ করে না। সে কারণে অন্তরকে গোনাহমুক্ত করার নিয়তে কুরআন-সুন্নাহর আমলে নিজেদের নিয়োজিত করবে মুমিন। তাতে মুমিনের অন্তর হবে কুরআন-সুন্নাহর নূরে আলোকিত।
তেমনি এমন ৩টি সুন্নাতি আমল রয়েছে, যে আমলগুলো করলে মুমিনের অন্তর আলোকিত হয় এবং অন্যান্য সুন্নাত আমলগুলো করাও সহজ হয়ে যায়। আর তাহলো-
>> সবার আগে বিশুদ্ধ সালাম দেয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কথা বলার আগে সালাম বিনিময় কর।’
পরস্পরের দেখা সাক্ষাৎ কিংবা যোগাযোগে একে অপরকে আগে সালাম দেয়ার প্রতিযোগিতা করা। সালামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। তবেই সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যাধি ঝগড়া-বিবাদমুক্ত আন্তরিক পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি হবে।
বিশুদ্ধভাবে সালাম দেয়ার সহজ কৌশল হলো- اَلسَّلَامُ (আস-সালামু)-এর শুরুর হামযাহ এবং শেষের মীম-এর পেশকে সুস্পষ্টভাবে উচ্চরণ করা।
মনে রাখতে হবে
মুসলমানের পারস্পরিক অভিভাদনে ‘সালাম’ দেয়া সুন্নাত। কিন্তু উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এ আমলটি নিজেদের মধ্যে জারি করতে পারলে ছোট-খাটো আরো অনেক সুন্নত জারি হয়ে যাবে। যেমন-
একদিন দুই দিন সালাম দিতে দিতে দেখা যাবে একে অপরের সঙ্গে হাসি মুখে কুশল বিনিময় শুরু করবে। বিশ্বনবি বলেছেন, ‘হাসি মুখে কুশল বিনিময়ে রয়েছে পরস্পরের জন্য সাদকার সাওয়াব।’
>> ডান দিক থেকে ভালো কাজ শুরু করা
প্রত্যেক ভালো কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা। ঘর থেকে বাহির হওয়া, মসজিদে প্রবেশ করা, জামা কাপড় পরা ইত্যাদি।
>> নিম্নমানের কাজ বাম দিক থেকে শুরু করা
প্রত্যেক নিম্নমানের কাজ এবং নিম্নমানের স্থানে বাম দিককে প্রাধান্য দেয়া। টয়লেটে প্রবেশের সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হওয়া। বাম হাতে ময়লা পরিষ্কার করা। পায়খানা পেশাবের পর বাম হাত ব্যবহার করা। ওজুতে নাকে পানি দেয়ার সময় বাম হাতের আঙুল ঢোকানো এবং পা ধোয়ার সময় বাম হাত ব্যবহার করা।
>> সার্বক্ষণিক আল্লাহকে স্মরণ করা
চলাফেরা, ওঠা-নামা, বাড়ি কিংবা সফরে থাকা অবস্থায় সার্বক্ষনিক আল্লাহর জিকিরে জিহ্বাকে সিক্ত করা। আল্লাহর জিকিরে হৃদয়কে তাজা করা। আল্লাহর জিকিরে গোনাহমুক্ত থাকা। যেমন-
– উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার বলা।
– নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলা।
– সমতলে হাটার সময় লা ইলাহা ইল্লাহ বলা।
– হাঁচি আসলে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
– হাঁচির উত্তরে ইয়ারহামুকুমুল্লাহ বলা।
– হাই আসলে লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলা।
– মৃত্যু সংবাদ আসলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইজি রাজিউন বলা।
– কবর দেখলে দোয়া পড়া।
– আনন্দের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
– দুঃসময় বা খারাপ কিছু হলে ইসতেগফার করা।
– বাবা-মার জন্য দোয়া করা।
– আজান শুনলে উত্তর দেয়া।
– ইক্বামতের উত্তর দেয়া।
– দেখা হলে মুসাহাফা করা এবং একে অপরের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার দোয়া- ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম বলা।
সর্বোপরি
প্রতিদিন নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা। সম্ভব হলে-
– ফজরের পর সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা।
– জোহরের পর সুরা ফাতাহ তেলাওয়াত করা।
– আসরের পর সুরা নাবা তেলাওয়াত করা।
– মাগরিবের পর সুরা ওয়াক্বিয়া তেলাওয়াত করা। এবং
– ইশার পর সুরা মুলক তেলাওয়াত করা।
বিশেষ করে-
– জুমআর দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। অন্ততঃ সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করা।
নামাজের পর সংক্ষিপ্ত সুন্নাতি আমল-
– ইস্তিগফার ৩ বার পড়া।
– আয়াতুল কুরসি ১ বার পড়া।
– সুরা ইখলাস ১ বার পড়া।
– সুরা ফালাক্ব ১ বার পড়া।
– সুরানাস ১ বার পড়া।
তাসবিহে ফাতেমি-
– সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার পড়া।
– আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার পড়া।
– আল্লাহু আকবার ৩৩/৩৪ বার পড়া।
এছাড়াও ছোট ছোট তাসবিহ-তাহলিলের পাশাপাশি প্রতিদিন ১০০ বার ইসতেগফার পড়া এবং কুরআন সুন্নাহর মাসনুন দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে সুন্নাতি আমলে নিজেদের নিয়োজিত রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত সুন্নাতি আমল দ্বারা নিজেদের আমলনামাকে সাজানোর মাধ্যেমে নিজেদের অন্তরকে আল্লাহর নূরে আলোকিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।