Home > জাতীয় > তৃতীয়বার ভাঙছে ওয়ার্কার্স পার্টি, আসছে নতুন দল

তৃতীয়বার ভাঙছে ওয়ার্কার্স পার্টি, আসছে নতুন দল

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিতে তৃতীয়বারের মতো ভাঙনের সুর বাজছে! প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে এসে আসন্ন দশম জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ মতাদর্শিক ও মতপার্থক্যের জেরে এমন সংকটে পড়েছে দলটি।

জানা গেছে, বর্তমানে দলটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে দলটির পলিটব্যুরোর বেশ কয়েকজন সদস্যের মতপার্থক্য চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন কংগ্রেসকে সামনে রেখে পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাসসহ অন্তত পাঁচজন সদস্যের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। তাদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলিলে দ্বিমত পোষণ করে বিকল্প প্রস্তাবও এসেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়ার্কার্স পার্টির এই মতভেদের মূলে পার্টির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান, দলের মতাদর্শ, রণনীতি, লেনিনীয় নীতি, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও অভিমত, আওয়ামী লীগের জোটে থাকা না থাকা, বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বে ভূমিকায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ, কমিউনিস্ট চরিত্র থেকে সরে আসা, সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে ভিন্নমত উপেক্ষা ইত্যাদি রয়েছে। অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই এমন মতপার্থক্য চলে আসছে, যা এখন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নিয়ে দলে ভাঙন সৃষ্টি করছে।

জানা গেছে, মেনন-বাদশার নেতৃত্বে পার্টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ ও ভিন্নমত পোষণ করে আসছেন পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্য। তা আমলে না নেয়ায় বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দলটির সর্বোচ্চ এ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের ১১ সদস্যের মধ্যে অন্তত পাঁচজন চলতি সপ্তাহেই পদ প্রত্যাহার করতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে পার্টির বিমল বিশ্বাস, নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদও রয়েছেন।

আগামী ২ নভেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টির চার দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস শুরু হতে যাচ্ছে। এতে উপস্থাপেনর জন্য পার্টির যে রাজনৈতিক দলিল প্রস্তুত করা হয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন নুরুল-জাহিদরা। তা আমলে না দিলে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেরিয়ে বিমল বিশ্বাসের নেতৃত্ব আলাদা দলও ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

বিকল্প এই প্রস্তাবে ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম কংগ্রেসের কথা উল্লেখ করে বাম ও দক্ষিণপন্থি বিচ্যুতির সুনির্দিষ্ট বহিঃপ্রকাশগুলো চিহ্নিত করে পার্টি অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য এই বিচ্যুতির বিরুদ্ধে মতাদর্শিক সংগ্রাম করার কথা জানিয়ে পার্টির সর্বস্তরে সুবিধাভোগী চক্রকে প্রতিহতের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিকল্প প্রস্তাবে ১৪ দলের নীতিনির্ধারণে শরিকদের ভূমিকা না থাকার কথা উল্লেখ করে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন ও সরকারে অংশগ্রহণের আওয়ামী লীগের সকল গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে পার্টির নেতাকর্মীদের নীরব সাক্ষী হতে বাধ্য হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, পার্টিতে মতাদর্শগত পার্থক্য নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলিলে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এই প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি নন তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে অসংখ্য অভিমত থাকে। এবার পলিটব্যুরোর দু’জন সদস্য লিখিতভাবে মত দিয়েছেন, তা পুরো পার্টিতে প্রচারও করা হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক প্রস্তাব ও সাংগঠনিক দলিলও সবার কাছে গেছে, তাতেও ভিন্নমত যুক্ত করা হয়েছে। এসব কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।

তবে এসব বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেননি জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ভিন্নমত থাকবে, ছোটখাটো সমস্যাও থাকতে পারে। কিন্তু সেটাকে বিকল্প দলিল বলা যায় না। ভোটের মাধ্যমে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়। তাই কংগ্রেসই সব কিছু ঠিক করবে।

জানতে চাইলে পার্টির সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি মার্কসবাদী সংগঠন, কিন্তু সেঅনুযায়ী দলের কোনো কিছুই হচ্ছে না। তাই পার্টিকে কমিউনিস্ট পার্টিও মনে করতে পারছি না। তাই আমি আমার প্রাথমিক সদস্য পদ প্রত্যাহার করে নেবো।

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে ইউনাইডেট কমিউনিস্ট লীগ ও সাম্যবাদী দলকে (আলী আব্বাস) নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। এরপর প্রথম দফায় ১৯৯৫ সালে পলিটব্যুরোর সদস্য টিপু বিশ্বাস দল থেকে বেরিয়ে গণফ্রন্ট এবং ২০০৪ সালে পলিটব্যুরোর আরেক সদস্য সাইফুল হক দল ছেড়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেন।