বাংলা সিনেমাকে সারা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মিলিত হতে চলেছে দুই বাংলা। যেখানে উপস্থিত থাকবেন দুই বাংলার জনপ্রিয় চিত্র তারকা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জিৎ মন্ধানি, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাওলি দাম, আলমগীর হোসেন, শাকিব খান, কবরী সারোয়ার, জয়া আহসানসহ আরো অনেকে।
মূলত দুই বাংলাকে এক করে প্রদান করা হবে ‘ভারত ও বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’। যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করবে টিএম ফিলমস।
আগামী ২১ অক্টোবর ঢাকার বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির নবরাত্রি মিলনায়তনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দুই বাংলার সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী, সেরা কন্ঠশিল্পী সহ মোট বিশটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়াও একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা আছে যেখানে অংশ নেবেন দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পীরা।
ওই দিন এক মঞ্চেই লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগমকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে (হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল) এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পুরস্কার প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জুরি কমিটির চেয়ারম্যান (বাংলাদেশ) আলমগীর হোসেন, জুরি কমিটির সদস্য (ভারত) তথা অরোরা ফিল্মস-এর কর্ণধার অঞ্জন বসু, জুরি কমিটির সদস্য (ভারত) তথা অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী, ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ফিরদাসুল হাসান, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও জিৎ পান্ধানি, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ফিল্ম ক্রিটিক গৌতম ভট্টাচার্য।
এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আলমগীর হোসেন জানান ‘মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক জায়গায় গিয়ে পুরস্কার দেয়। অনেক সময় কষ্ট হয়, আমরা বাঙালিরা এত পিছিয়ে আছি কেন, আমরা না হয় পুরনো দিনের শিল্পী কিন্ত এখন তো আমাদের হাতে বুম্বা (প্রসেনজিৎ) আছে, জিৎ আছে, ঋতু (ঋতুপর্ণা) আছে, ঢাকার শাকিব খান আছেন।
আমরা কিসে কম আছি? আমরা কোন অংশে কম নেই। আসলে আমাদের যেটা অভাব সেটা হলো মানসিকতা। এর কারণে আমরা এগিয়ে আসতে পারছিনা। বাঙালিরা যদি এগিয়ে আসে, তবে মুম্বাইকে অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখি।
আলমগীর হোসেন আরও জানান, ‘ভারত বাংলাদেশ যদি একসাথে চলচ্চিত্র করতে পারে তবে দুই দেশেরই উপকার হবে।’
তার প্রশ্ন, ‘পাকিস্তান যদি ভারতের ছবি সে দেশে চালাতে পারে, তবে আমরা কেন দুই বাংলার ছবি নিতে পারবো না?’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঢাকায় অভিনয় করেছি তখন হলের সংখ্যা ছিল ১২০০, আর এখন ঢাকায় হলের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। কলকাতায়ও বেশ কয়েকটি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। সহজ কথা হলো চলচ্চিত্র বাঁচাতে গেলে বা সিনেমা হলকে বাঁচাতে হলে দু দেশের সিনেমা দরকার।
তা হলে কলকাতা ও ঢাকায় হলের সংখ্যা বাড়বে। তবে কলকাতায় একটি সুবিধা হলো এরা বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দি ছবিও চালাতে পারে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে সেই সুযোগ নেই। আমাদের ওখানে হিন্দি ছবি চালাতে দেওয়া হয় না।’
একসময় মজা করে তিনি বলেন, ‘আমাকে জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান করার জন্য সত্যিই গর্বিত। যদিও আমি এর যোগ্য নেই, কারণ আমি একজন ফাঁকিবাজ অভিনেতা। সারা জীবন ফাঁকি দিয়ে অভিনয় করেছি। যখন আমি একটু সিরিয়াস হতে থাকলাম তখন দেখলাম যে আমার সময় চলে গেছে। মানুষ আমার ছবি আর দেখে না। আমি এখন ছবির পরিচালনা করি, প্রযোজনা করি।।’
অন্যদিকে টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ বলেন, ‘যৌথ বাংলা নিয়ে অ্যাওয়ার্ড শো করার ব্যাপারে গত ১০ বছর ধরে ভাবনা চিন্তা চলছে। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পুরস্কারটা বড় কথা নয; কে পেলেন, কারা পেলেন না, সেটাও নয়।
আমার একটাই স্বপ্ন দুই দেশের ছবি নয়, আমাদের বাংলা সিনেমা বানাতে হবে। এমন একটা ইন্ডাস্ট্রি হোক যেখানে সবাই মিলে বলবে যে আমরা বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় যেদিন দুই বাংলা এক হয়ে যাবে, পাঁচ বছরের মধ্যে আমরাও ‘বাহুবলি’ সিনেমা বানিয়ে ফেলবো। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত তার অভিনয় জীবনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি ভারত ও বাংলাদেশের দুই জায়গাতেই খুব আপন একজন মানুষ। এপার বাংলায় যেমন আদর পেয়েছি তেমনই বাংলাদেশেও কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক আদর পেয়েছি, আজও পাই। আমি কখনই মনে করিনা যে সেটা আলাদা একটা দেশ বা আলাদা একটা জায়গা। সবসময় মনে হয় দুই বাংলাই আমার নিজের।’