ভারতের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, মুসলিমদের বাদ দিয়ে সবাইকে নাগরিকত্ব দেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা আইন ও সংবিধান বিরোধী।
গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদে এক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন।
ওয়াইসি বলেন, ‘বিজেপি শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, মুসলিম বাদে সবাইকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য কী? এটা কী ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ধারা সমতার অধিকার বিরোধী নয়? এটা কী বৈষম্য নয়?
এটা আমাদের সংবিধানের ১৫ ধারা বিরোধী, মৌলিক অধিকারবিরোধী। বিজেপি সরকার কী বার্তা দিতে চাচ্ছে? বিজেপি বলছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমরা যদি সেখানে নির্যাতনের শিকার হয় এখানেই তো তারা আসবেন।
কিন্তু আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই এখানকার মুসলিমদের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশের বিষয়ে কী করার আছে? আমাদের চিন্তা ভাবনায় কখনও পাকিস্তান নিয়ে ভাবি না। আফগানিস্তানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করি না।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী থাকতে পারে আপনারা বলুন। আপনারাই তো পাকিস্তানকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশ তৈরি করেছেন। আপনারা বানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের কেন এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে? আমাদের উপরে কেন সন্দেহ করা হয়? ৭০ বছর হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু এদের চিন্তাভাবনা দেখুন। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক থাকতে পারে আপনারা বলুন?’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এনআরসি কার্যকর করবেন? কেন আপনারা এনআরসি কার্যকর করবেন? অসমের সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। কংগ্রেসের দলের জন্য এনআরসি হয়েছে। কংগ্রেস অসম চুক্তি করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট তা পর্যবেক্ষণ করেছে।
এজন্য ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু কী বেরোলো? অসমে পাহাড় খনন করে ইঁদুর পর্যন্ত বেরোয়নি! কেবল ১৯ লাখ লোকের নাম এনআরসি’র বাইরে আছে। যতদিন এনআরসি’র তালিকা আসেনি বিজেপি-শিবসেনা বলছিল এনআরসি খুব ভালো, খুব ভালো।
এনআরসিকে ওরা এত মহব্বত করছিল মনে হচ্ছিল এনআরসি ওদের লায়লা! কিন্তু যখন এনআরসি প্রকাশ্যে এল তখন বুঝতে পেরেছে ১৯ লাখ লোকের নাম বেরিয়েছে। আমি সেই সময়ই বলেছিলাম আপনারা যে কাজ করতে যাচ্ছেন, এতে কিছুই অর্জিত হবে না।
বিজেপি-শিবসেনার মাথাব্যথা শুরু হয়েছে যখন বুঝতে পেরেছে এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখের মধ্যে বেশিরভাগ নাম আমাদের অমুসলিম ভাই-বোনেদের, আদিবাসী, গোর্খাদের এবং যারা নথি দেখাতে পারেনি তাদের। এজন্য সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি বলে দিয়েছে অসমের এনআরসিকে আমরা মানি না!’
ওয়াইসি বলেন, ‘১৯ লাখ লোকের নাম যখন বাদ পড়ল এবং যখন বুঝতে পারল বেশিরভাগ নাম অমুসলিমদের- তখন ওরা তা মানছে না। এখন বলছে- আমরা সংসদে নয়া আইন আনব। এনআরসি আনব।
আপনাদের উদ্দেশ্য হল- আপনারা টার্গেট করতে চাচ্ছে গরীব ও নিপীড়িত জনতাকে যেভাবে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে দিয়েছে। আপনারা কেবল নথি যাদের কাছে নেই তাদেরকে কষ্ট দিতে চাচ্ছেন- এটাই আপনাদের উদ্দেশ্য। মনে রাখবেন- আপনারা যা করতে যাচ্ছেন এবং সেজন্য অসমে যদি ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় গোটা দেশে কমপক্ষে ৬০/৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
এই অর্থ গরীবদের জন্য ব্যবহার করুন। খাওয়ার পানির লাইনের সংযোগ দিন। পাঁচ বছরে সাড়ে চৌদ্দ হাজার কৃষক মহারাষ্ট্রে আত্মহত্যা করেছেন। চলতি বছরে আওরঙ্গাবাদ জেলায় কমপক্ষে ৭৫ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
এগুলো বন্ধ করুন। গরীবদের জন্য অর্থ খরচ করুন। যেয়ে দেখুন যেখানে দলিত ও মুসলিমদের বসতি আছে সেখানে নিকাশি ব্যবস্থা নেই, ড্রেনে নোংরা আবর্জনায় ভর্তি! ব্যাঙ্ক থেকে তপসিলি ভাইদের জন্য ঋণ দিন। কিন্তু এসব ওরা করবেন না। কিছুই করবেন না।
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন না। ওরা বিদ্বেষের রাজনীতি করছেন। হৃদয়ের মেলবন্ধনের রাজনীতি ওদের নেই। ভয়, আতঙ্ক সৃষ্টির রাজনীতি, ভয় দেখিয়ে রাখাই ওদের উদ্দেশ্য। আমি আপনাদের বলতে চাই, আমরা এক নম্বর নাগরিক ছিলাম এবং এক নম্বর নাগরিকই থাকব ইনশাআল্লাহ্তায়ালা।