কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একজন রোহিঙ্গা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর বা আইএসপিআর জানাচ্ছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখাবার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিবিসি বাংলা
রোহিঙ্গাদের পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট ‘রোহিঙ্গা ভিশন ডট কম’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ধর্ষণের এই অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়।
প্রতিবেদনটিতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটার সময় উল্লেখ করা হয়েছে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর রবিবার, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা।
এতে বলা হয়, দুইজন কিশোরী তাদের ঘরের মধ্যে খেলা করছিল । সেই সময় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দুইজন সদস্য এদের একজনকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
সেনাসদস্যরা স্থান ত্যাগ করার পরে প্রতিবেশীরা কিশোরীটিকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যায়।
পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
আইএসপিআর-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, “অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিদেশি অনলাইন পোর্টালে আমরা দেখতে পেলাম ১২ বছরের একটা রোহিঙ্গা মেয়ে সেনাসদস্য কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে”।
“ঐ সময় যৌথবাহিনীর যে নিয়মিত টহল হয় সেই টহল ঐখানে দিচ্ছিল। যাইহোক, বিদেশি অনলাইন ভিত্তিক পোর্টালে এই অভিযোগটা আসার পরে আমরা সে বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে একটা উচ্চ পর্যায়ের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছি”।
টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের একাধিক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে বিবিসির কথা হয়। তারা জানান, তারাও ২৯শে সেপ্টেম্বরের এই ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত আছেন। সেনাসদস্যদের জড়িত থাকার কথাও তারা উল্লেখ করেন।
একজন রোহিঙ্গা নেতা বলছিলেন, ঐ ঘটনার পর ‘ভিকটিমের পরিবার’ এখন আর কোন কথা বলতে চাচ্ছে না।
কক্সবাজারের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৩০ শে সেপ্টেম্বর সদর হাসপাতালে একজন ‘রেপ ভিকটিমকে’ চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি দুইদিন ঐ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
আইএসপিআর এর পরিচালক লে .কর্নেল জায়েদ অভিযুক্ত সেনাসদস্যদের ব্যাপারে বলছেন, “যদি দোষী প্রমাণিত হয়, সেই দোষের মাত্রা অনুযায়ী দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে”।
তদন্ত কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে দিয়ে এই কমিটি গঠন করেছে, যারা এই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে, এটা যে স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার সেটা উপলব্ধি করে সেই রকমভাবে তদন্ত করতে পারেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন”।
এদিকে, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিবিসিকে জানান এই অভিযোগের কথা লোকমুখে শুনতে পেয়ে তিনি পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছিলেন। তবে ভিকটিমের পরিবার বা প্রতিবেশী এমন কাওকে পাওয়া যায়নি।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, “যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ না করে তাহলে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারিনা। তবে আমরা এমন একটা গুঞ্জন শুনে লোক পাঠিয়েছিলাম কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি”।
কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার অবশ্য বলেন, “এই ধরণের তথ্য সত্য না”।
এদিকে কক্সবাজারে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, “এই প্রতিবেদন সম্পর্কে তারা অবগত আছে”।
তারা আরো বলছে, এই ধরণের ঘটনায় ব্যক্তিকে চিকিৎসা, মানসিক এবং শারীরিক সাহায্য পেতে পারে।
সংস্থাটি বলছে, “ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার বজায় রাখা এবং চলমান তদন্তে আমরা ব্যক্তির বিস্তারিত জানাতে পারি না”।
২০১৭ সালের অগাস্টের শেষ দিকে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করে।
তাদের অনেকেই বাংলাদেশে এসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার নানা অভিযোগ করেছিলেন।
এদের অনেকেই গণধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ণের অভিযোগও করেছিলেন।
বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১ লক্ষের মত রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী কাজ করছে। সেখানে বেশ কিছু দেশি ,বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য।