নওগাঁর পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগ নির্ণয় যন্ত্র ও চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিন, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিন ও ইসিজি যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এছাড়াও আছে চিকিৎসক সংকট। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ফলে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবন নির্মাণের কয়েক বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি দেয়া হয়নি।
বাড়ানো হয়নি সুযোগ-সুবিধা। এজন্য গত ৮ বছর ধরে ৩১ শয্যার জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে ৫০ শয্যার কার্যক্রম। আর ৩১ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল ও যন্ত্রপাতি থাকার কথা সেটিও এখন নেই। ৫০ শয্যা হওয়ায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসক পদ থাকার কথা ২১টি। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রায় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে।
পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। গাইনি, অবেদনবিদ, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, শিশুসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদসহ ২১টি পদের মধ্যে ১৭টি পদই শূন্য। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন না। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন মাত্র দুইজন চিকিৎসক রোগী দেখেন। অনেক সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসকরা সময়মতো হাসপাতালে আসতে পারেন না।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি এক্সরে মেশিন সরবরাহ করা হলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় শুরু থেকে চালু করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে টেকনিশিয়ান এলেও অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণে মেশিনটিকে আর চালু করা হয়নি। এটি সরবরাহের পর থেকে গত আট বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিনটি গত ছয় মাস ধরে নষ্ট, আর ইসিজি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে গত চার মাস ধরে। হাসপাতালটিতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স সচল এবং আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স গত ১৫ বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে যেটি সচল আছে সেটিও প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।
এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনো মেশিন ও ইসিজি যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীরা রোগ নির্ণয়ের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে বাইরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলো থেকে এসব সেবা নিতে হচ্ছে।
উপজেলার নিতপুর গ্রামের গৃহবধু বয়জ্যেষ্ঠ জোসনা বেগম ও সরাইগাছী গ্রামের ভ্যানচালক শহীদুল বলেন, বৃষ্টিতে ভেজার কারণে গত কয়েকদিন থেকে তারা সর্দি জ্বরে ভুগছিলেন। সকালে হাসপাতলে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান। দেড় ঘণ্টা পর ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে শরীর যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাক্তারাও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মেডিকেল অফিসার দিয়ে সকল রোগের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। গ্রামের অসহায় ও গরীবদের কথা ভেবে দ্রুত চিকিৎসক সংকট দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামানা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আগে রোগীর চাপ একটু কম ছিল। এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০-৩০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। তিনিসহ ২-৩ জন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পালাক্রমে ইনডোর-আউটডোরে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। আশা করছি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।
পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইবনে ইমাম বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লেখা হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকেও অবহিত করা হয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট। এ সংকটের মধ্য দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসক নিয়োগ হলে এ সংকট কেটে যাবে।