মেয়র সাঈদ খোকনের বাজরিগার পাখি অবমুক্ত করার খবরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার জন্ম দেয়। ঠিক কী ভেবে মেয়র খাঁচার পাখিকে অবমুক্ত করলেন সে বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনে ৭৩টি বাজরিগার পাখি অবমুক্ত করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
গত রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে শুভ কামনা জানিয়ে রাজধানীর নগর ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পাখি অবমুক্ত করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
ওই অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদসহ ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতা, কর্পোরেশন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু মেয়র সাঈদ খোকনের বাজরিগার পাখি অবমুক্ত করার খবরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার জন্ম দেয়। ঠিক কী ভেবে মেয়র খাঁচার পাখিকে অবমুক্ত করলেন সে বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাস হুবহু (বানানসহ) তুলে ধরা হলো-
সুমন দে নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অনেক বড় একটা ভুল হইছে এসব পাখিগুলো আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সেখানে বসবাস উপযোগী নয় এদিকে (এদেরকে) অন্য পাখি সব মেরে এবং খেয়ে ফেলবে।”
শাওলিন আক্তার নামের অপর একজন লেখেন, “না বুঝে এমন কাজ করার জন্য, ওনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
মঈন কাদির নামে অপর একজন লেখেন, “এরা কি জানে না যে বাংলাদেশে যেসব বাজরিগার পাওয়া যায় সেগুলা খাঁচায় থেকে অভ্যস্ত। এগুলা তো মুক্ত পরিবেশে বড় হওয়া পাখি না। কিছুদিনে মধ্যেই সবগুলা পাখি মারা পড়বে। মাননীয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ৭৩টা পাখি মারার ব্যবস্থা হইল।”
অন্যদিকে কেউ কেউ আবার সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগকে এরসঙ্গে এক করে দেখেছেন। সাইফুল্লাহ সবুজ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে এটা তদারকি করার জন্য সে কম টাকার মধ্যে বাজরিগারই পেয়েছে। এ ৭৩টি বাজরিগারের জন্য হয়ত ৩লক্ষ টাকা বিল করে বসে আছে।”
শিবলি সাইফুল্লাহ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই লোকটার বিপক্ষে মামলা করা উচিত কেজ বার্ড কে ছেড়ে দেয়ার জন্য। এদেরকে মারার অধিকার তাকে কে দিসে? দুঃখজনক সত্য হলো এত এত জ্ঞানী গুণী মানুষ থাকা সত্ত্বেও কারো মাথায় একবারও আসলো না এসব পাখি উন্মুক্ত পরিবেশে বাচতে পারবেনা… “
বাজরিগার পাখির বিষয়ে জানতে ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে।
তিনি জানান, বাজরিগার মূলত পোষা পাখি। পাখিটির আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। এরা সবুজ, হলুদ, সাদা, পাঁচ মেশালি ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে। দেখার সৈন্দর্যের কারণেই বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী এ পাখিটির ক্যাপটিভ ব্রিডিং করা ও খাঁচায় পোষা হয়।
বাজরিগার পাখি অবমুক্ত করা হলে তাতে পাখিগুলো প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মনিরুল এইচ খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “মোটা দাগে বিবেচনা করলে প্রধানত দুটি কারণে এ পাখি প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা মোটেও উচিত নয়। প্রথমত, মানুষের সংস্পর্শে থাকা খাঁচার (পোষা) পাখি বিভিন্ন রোগ-জীবাণু বহন করে। এসব পাখি প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে, প্রকৃতিতে থাকা পাখির সঙ্গে মিশে, সেসব রোগ প্রকৃতিতে পাখির মধ্যে ছড়িয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”
দ্বিতীয়ত, “বাজরিগার পাখি প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে সেটা যে মারা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এরা প্রকৃতিতে অভ্যস্ত নয়। খাবার খোঁজা, আবাস তৈরি, অন্যান্য শিকারি পশু-পাখি থেকে নিজেকে রক্ষার কৌশল ইত্যাদি কোনো কিছুই তাদের জানা নেই, তারা মানিয়েও নিতে পারে না। তাই বাজরিগারকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার অর্থ তাকে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেওয়া।”
অন্যদিকে বাজরিগার পাখি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) মিহির কুমার দো ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বাজরিগার খাঁচার পাখি। ভিনদেশি এ পাখিটি বাংলাদেশে ক্যাপটিভ ব্রিডিং করা হয়। অর্থাৎ এই পাখিটির জন্ম হয় খাঁচায়, পরবর্তীতে কারো পোষ্য হিসেবে খাঁচায়ই এর মৃত্যু হয়।”
বাজরিগার অবমুক্ত করলে প্রকৃতিতে টিকে থেকে বংশ বৃদ্ধি করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মিহির কুমার দো বলেন, “বংশবৃদ্ধি তো দূরে থাক, প্রকৃতিতে অবমুক্ত করলে এ পাখির মৃত্যু অবধারিত।”
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে খাঁচার পাখি বাজরিগার অবমুক্ত করার বিষয়টি জানতে একাধিকবার মেয়র সাঈদ খোকনের মোবাইলে ফোন করা হলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এদিকে বাজরিগার পাখি অবমুক্ত করার বিষয়টি জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।