পূর্ব আফ্রিকার দরিদ্রপীড়িত দেশ ইকুয়েটোরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট তিউদারো ওবিয়াংয়ের ছেলের ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ডের সরকার- যেগুলো শিগগিরই নিলামে উঠানো হবে। এক মানি লন্ডারিং মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এই গাড়িগুলো জব্দ করেছে সুইস সরকার। ধারণা করা হচ্ছে নিলামে গাড়িগুলো বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে বাংলাদেশি টাকায় তার পরিমাণ দেড় ’শ কোটি টাকারও বেশি।
স্থানীয় বোনহামস নামের একটি কোম্পিনির গাড়িগুলো নিলামে তুলবে। নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইকুয়েটোরিয়াল গিনিতে দাতব্য কাজে ব্যয় করা হবে।
স্বাধীনতার পর থেকেই ইকুয়েটোরিয়াল গিনি দরিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে ১৯৯৬ সালে দেশটিতে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। ওই অঞ্চলে তৃতীয় বৃহত্তম তেলের মজুদ বর্তমানে দেশটির। কিন্তু তাতে সাধারণ জনগনের ভাগ্যের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। ৪০ বছর ধরে শাসন ক্ষমতা আকড়ে ধরে আছেন প্রেসিডেন্ট তিউদারো ওবিয়াং। তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ আছে। দীর্ঘ চার দশকের শাসনে তিনি তার পরিবার সম্পদের পাহাড় গড়েছে বলে কথিত আছে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত।
প্রেসিডেন্টের যে ছেলের (তিউদারো এনগুয়েমা ওবিয়াং ম্যাঙ্গুয়ে) এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো জব্দ করা হয়েছে, কিছুদিন আছে তাকে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন ওবিয়াং।
এ বছর ফেব্রুয়াতে প্রেসিডেন্ট পুত্রের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তিতে অনিয়ম ও মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলার কার্যক্রম শেষ করে এনেছে জেনেভার আদালত।
জব্দকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাদা ও ক্রিম রংঙের একটি ল্যামবোরঘিনি ভেনন রোডস্টার- যে গাড়ির মাত্র ৯টি ‘কপি’ তৈরি করেছে প্রস্তুতকারক কোম্পানি এবং এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২৫ কিলোমিটার চালানো হয়েছে গাড়িটি। গাড়িটি ৫২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে (৪৫ কোটি টাকা প্রায়) বিক্রির আশা করছে নিলামকারী কোম্পানিটি।
ফেরারি কোম্পানির একটি ‘লা ফেরারি’ যেটি ফর্মূলা ওয়ান মটর রেসের জন্য প্রস্তুতকৃত এমন একটি গাড়িও রয়েছে। যেটির দাম উঠতে পারে ২৬ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক।
নিলামকারী কোম্পানি জানিয়েছে- সবগুলো গাড়িই বলতে গেলে নতুন। খুব কমই ব্যবহার করা হয়েছে এসব গাড়ি। তাই নিলামে আরো বেশি দাম উঠতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। সব মিলে এসবের মধ্যে রয়েছে সাতটি ফেরারি, তিনটি ল্যামবোরিঘিনি, পাঁচটি বেন্টলেস, একটি ম্যাসেরাটি ও একটি ম্যাকলারেন।
শুধু সুইজারল্যান্ড নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই অবৈধ সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে এনগুয়েমার বিরুদ্ধে। গত বছর ব্রাজিলের সরকার তার ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার এবং একটি দামী ঘড়ি জব্দ করেছে। ২০১৭ সালে প্যারিসের একটি আদালত এনগুয়েমাকে লাখ লাখ ডলার সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বেতনের চেয়ে তার ব্যয় এক হাজার গুন বেশি বলে আদালত জানিয়েছে। প্যারিসে তার রয়েছে ছয় তলা একটি বিলাসবহুল ভবন। ফ্রান্সে তার একটি প্রমোদতরী আছে যেটির দাম কয়েক কোটি ডলার।