Home > অন্যান্য > থাই ডন সেলিম প্রধানের পাঁচ স্ত্রী, ১ রাশিয়ান, ১ আমেরিকান, ১ জাপানি এবং ২ বাংলাদেশি

থাই ডন সেলিম প্রধানের পাঁচ স্ত্রী, ১ রাশিয়ান, ১ আমেরিকান, ১ জাপানি এবং ২ বাংলাদেশি

রহস্যমানব সেলিম প্রধান , পরিচিত মহলে থাই ডন হিসাবে অনেকে চেনে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষায় দেশ ছাড়তে চেপে বসেছিলেন থাই এয়ারের বিমানে। বিজনেস ক্লাসের এই যাত্রী অবশ্য দেশ ছাড়তে পারেননি। বিমান ছাড়ার আগেই তাকে পাকড়াও করেছে র‌্যাবের একটি দল। থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী ফ্লাইট থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়।

রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত স্পা সেন্টারের মালিক তিনি। স্পা বাদে দৃশ্যমান অন্যকোন ব্যবসা না থাকা সত্ত্বেও কোটি টাকার গাড়িতে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে তার চলাফেরা। বিশ্বের একাধিক দেশে তার শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ও পাতায়া শহরে তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ থাকায়, রহস্যমানব সেলিম প্রধান থাই ডন হিসাবেই পরিচিত অনেকের কাছে।

দেশে ক্যাসিনো অভিযান শুরু হবার পরপরই একরকম গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি, তবে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমানবন্দরে আগে থেকেই তার নামে রেড আলার্ট ছিল।

গোয়েন্দারা সূত্র জানা যায়, ঢাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক থাইল্যান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এসব অর্থ পাচারে সহায়তা করেন সেলিম প্রধান। এছাড়া সেলিম আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।

তবে তার গ্রেফতারের খবরে বহু প্রভাবশালীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কেননা তিনি এ সারির অনেকের বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। মূলত এমন অভিযোগেই তাকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি।

জানা যায়, ১/১১ সরকারের সময়ে জাহিদ নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সেলিম প্রধান বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের চলাফেরা দেখেই অনেকে হতভম্ব হয়ে যান। কারণ তার আশপাশে সবসময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ১০ জন দেহরক্ষী থাকেন।

রাস্তায় চলার সময় গাড়িতে উচ্চ শব্দে হুটার বাজানো হয়। ভিআইপি প্রটোকলের মতোই তার গাড়িবহরে থাকে ৫-৬টি দামি গাড়ি। বহরের মাঝখানে থাকে সেলিমের কালো টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি। সেলিম প্রধানের বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে থাইল্যান্ডে। ব্যাংককের পাতায়া বিচের কাছে তিনি ডিস্কো খোলেন ২০০৪ সালের দিকে।
আছে হোটেল ব্যবসাও। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সেলিম প্রধান একসময় থাইল্যান্ডের ডন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। থাইল্যান্ডের পাতায়া বিচঘেঁষা পাশাপাশি দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। পাতায়া শহরেও প্রধান স্পা নামে একাধিক বিউটি সেন্টার রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু হয়। এতে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে সেলিম প্রধানের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে আসে। এরপরই মূলত কোণঠাসা হয়ে পড়েন থাই পাসপোর্টধারী সেলিম প্রধান।

সেলিম প্রধান জাপানিদের অর্থায়নে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। বিএনপি সরকারের সময় এখান থেকে প্রায় সব ব্যাংকের চেক বইসহ ব্যাংকিং দলিলপত্র ছাপানো হতো। এই প্রিন্টিং ব্যবসার নামে তিনি একাধিক ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।

ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতে তার সঙ্গে হাত মেলান ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। জনৈক ফরিদ নামের রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সেলিম প্রধানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন ‘প্রধান স্পা সেন্টারে’ অনেক প্রভাবশালীর যাতায়াতের কথা শোনা যায়।
গুলশানের ৩৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত এই স্পা সেন্টার ঘিরে মুখরোচক নানা কথাও আছে রাতের ধনাঢ্যপাড়ায়। সঙ্গতকারণে মাঝে মাঝেই সেখানে ভিআইপি আগন্তুকের দেখা মেলে।

এ সময় স্পা সেন্টার ঘিরে নিরাপত্তার তোড়জোড় শুরু হয়। এ সুবাদে অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। রহস্যমানব সেলিম প্রধানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায়।

সূত্র বলছে, ঋণের নামে রূপালী ব্যাংকের ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অপরাধ জগতে নাম লেখান স্পা ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান। জাপানের অর্থায়নে শিল্প গড়ার নামে ঋণ নেয়া হলেও পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান সেলিম।
স্থায়ী আবাস গড়েন জাপানের রাজধানী টোকিওতে। কিন্তু টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন। জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে চলে যান আমেরিকায়। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করেন।
কিন্তু এ যাত্রায়ও সফল হননি। সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তাকে বেশিদিন কারাবাস করতে হয়নি। এরপর গুলশানের একটি স্পা সেন্টার ঘিরে তিনি নতুন করে নেটওয়ার্ক গোছানোর কাজ শুরু করেন।

সেলিম প্রধানের মোট ৫ জন স্ত্রী আছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। এর মধ্যে একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান, একজন জাপানি এবং দু’জন বাংলাদেশি। সেলিমের ছোট বউ বা ৫ নম্বর স্ত্রী সহকারী কাস্টমস কমিশনার। বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সেলিম প্রধান তার স্ত্রীকে চাকরি দিতে যুবলীগের এক নেতাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সব ফাইনাল করেন। সেলিম প্রধানের ৩৩ নম্বর রোডের স্পা সেন্টারটি একসময় চালাতেন কয়েকজন জাপানি নাগরিক। তাদের সঙ্গে সখ্য থাকার সুবাদে তিনি জাপান যাওয়ার টিকিট পান।

কিন্তু তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করে জাপানিদের কাছ থেকে স্পা সেন্টার দখল করে নাম দেন ‘প্রধান স্পা’। যে বাড়িতে স্পা সেন্টারটি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে, এর মালিক শাহজাহান নামের এক বিএনপি নেতা, গুলশানের এই বাড়িটি সেলিম প্রধান দীর্ঘ দিন ধরে দখল করে আছেন। তথ্যসূত্র : যুগান্তর