Home > জাতীয় > ক্যাসিনো ডন সেলিমের মাসিক আয় ৯ কোটি টাকা

ক্যাসিনো ডন সেলিমের মাসিক আয় ৯ কোটি টাকা

প্রতিমাসে অনলাইন ক্যাসিনো থেকে ৯ কোটি টাকা আয় হতো সেলিম প্রধানের। তার আয়ের অবৈধ টাকা তিনটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা করা হত। এরপর সেসব টাকা হুন্ডি বা সঙ্গে করে বিদেশে পাচার করে আসছিলেন তিনি। এমনকি সেসব টাকা লন্ডনেও পাচারের তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশে অনলাইনে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অভিযান শেষে এসব কথা জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক ও র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম। অভিযান পরিচালনা করেন র‍্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম।

সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তার গুলশানের বাসায় অনুসন্ধান শুরু করে র‍্যাব। অনুসন্ধানে র‍্যাব তার বাসা থেকে বিদেশি ৪৮টি মদের বোতল নগদ ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করে। এর মধ্যে গুলশান বাসা থেকে পাওয়া যায় ৮ লাখ টাকা। এছাড়া তার বনানীর অফিস থেকে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে ২৩টি দেশের ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা সম-মূল্যেরর বৈদেশিক মুদ্রা, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে জব্দ করা হয়েছে অনলাইন ক্যাসিনো খেলার মূল সার্ভার, আটটি ল্যাপটপ এবং দুটি হরিণের চামড়া।’

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘অনলাইনে ক্যাসিনো খেলতে হলে গ্রাহকের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয়। সেসব টাকা তিনটি গেটওয়েতে জমা হত। খেলায় জিতলে টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত যেত, অন্যথায় টাকাগুলো গেটওয়েতে থেকে যেত।’

‘সেলিম প্রধানের সহকারী মো. আক্তারুজ্জামান প্রতি সপ্তাহে সেসব গেটওয়ের টাকা তুলে সেলন, যমুনা ও কমার্শিয়াল তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। এরপর সেসব টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বা ব্যক্তির সঙ্গে করে বিদেশে চলে যেত।’

সারওয়ার-বিন-কাশেম আরও বলেন, ‘সেলিম প্রধানের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সখ্যতা ছিল। তাকে বিএমডাব্লিউ গাড়িও গিফট করেছিলেন সেলিম। এছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, বিভিন্নভাবে লন্ডনেও টাকা পাঠিয়েছেন তিনি।’

কি পরিমাণ টাকা লন্ডনে পাচার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা গেটওয়ে থেকে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। এমন আরও কিছু গেটওয়ে রয়েছে, সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হরিণের চামড়া পাওয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মানিলন্ডারিং এবং মাদকদ্রব্য আইনে তিনটি মামলা দায়ের করব। আর এসব মামলায় সেলিম প্রধান এবং তার দুই সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রোমান গ্রফতার দেখানো হবে।’

১৯৭৩ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা সেলিম প্রধান তার ভাইয়ের হাত ধরে ১৯৮৮ সালে জাপান চলে যায়। সেখানে গিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে গাড়ির ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে জাপানিদের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর সেখান থেকে থাইল্যান্ড চলে যায়। সেখানে শিপইয়ার্ডের ব্যবসা শুরু করে।

পরবর্তীতে জাপানিদের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। যার নাম মিস্টার দু। এই মিস্টার দু সেলিমকে বাংলাদেশ একটি কনস্ট্রাকশন সাইট খোলার প্রস্তাব দেয়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ একটি অনলাইন ক্যাসিনো খেলার উপদেশও প্রদান করে। সেই সূত্র ধরে টি-২১ এবং পি-২৪ নামে অনলাইন গেমিং সাইট চালু করে। এর মূল কাজ হচ্ছে ক্যাসিনো বা টাকার মাধ্যমে জুয়া খেলা।