আজকের পৃথিবী করোনোভাইরাসের মুখোমুখি। ভয়াবহ এই রোগের উৎপত্তি কিছুদিন আগে চীনের উহান প্রদেশে। সেখানে মহামারি আকারে এই অচেনা রোগ দেখা দিলে তারা সে প্রদেশকে অবরুদ্ধ করে। তবু উহানের করোনা চীনের প্রাচীর ছাড়িয়ে এখন দেশে দেশে মানুষকে আক্রান্ত করছে। শতাধিক দেশ এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সর্বশেষ রবিবার বিকালে বাংলাদেশে ইতালি-ফেরত দুজনসহ তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। কয়েকজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চীনের বাইরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে ব্যাপকহারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ইতালিতে ১ কোটি ৬০ লাখ নাগরিককে বাধ্যতামূলক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার। মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৬৬ জন। বিশ্বব্যাপী ১ লাখ ১০ হাজার ১১০ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হলেও মৃতের সংখ্যা যেমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করছে, ভয়-আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে, তেমনি আশার আলো জাগিয়েছে ৬২ হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে। প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে যার বড় অঙ্কটাই চীনে। তবে চীনেই এখন রোগী কমে যাওয়ায় অনেক হাসপাতাল যা সাময়িক চালু হয় তা বন্ধ করা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টও করোনার আঁতুড়ঘরে সফর করেছেন।
চীনসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীজুড়েই শক্তিশালী, উন্নত রাষ্ট্রগুলো এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি। অনেক দেশ সে চেষ্টা শুরু করেছে। সফল হওয়ার খবর এখনো আসেনি। তবে আসবে। যারাই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবে মোটা দামে যে কোনো বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি কিনে নিয়ে মুনাফা করবে। এটা যেমন সত্য, তেমনি মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে যে রক্ষা পাবে সেটাই সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হবে। অনেকে বলছেন, সভ্যতার নামে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে উন্নত দুনিয়া বা মানবজাতি যে বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছে, প্রকৃতি আজ তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। করোনাভাইরাস তাই মানবসভ্যতার সামনে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সংখ্যা দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্ক বা ভয়ের কোনো কারণ নেই। সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র পথ। যিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, প্রস্তুতি না নিয়ে তার কাছে যাওয়া যাবে না। তাকে স্পর্শ করা যাবে না।
বাংলাদেশে একসময় ডেঙ্গুজ্বর নীরব ঘাতকের মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিত। মেডিসিনের বিখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করে ডেঙ্গু থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষা করেন। কিন্তু দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় এডিস মশা ধ্বংস করতে না পারার কারণে গেল বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখের ওপরে মানুষ। গণমাধ্যম বলেছিল, আড়াই শর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিশ্চিত করেছিল ১৪৮ জনের প্রাণহাণি।
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার পর আমাদের দেশেও চিকিৎসকরা ভয় না পেয়ে সচেতন হওয়ার এবং কী কী করণীয় তার বার্তা দিচ্ছেন। সরকার বলছে, হাসপাতালগুলোয় প্রস্তুতি রেখেছে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যার কাছে মানুষের সবচেয়ে ভরসা তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আক্রান্ত হলেই যে মৃত্যু হবে এমন নয়। আক্রান্তের অধিকাংশই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বনের জন্য জনসমাগম বন্ধ রাখা, করমর্দন, কোলাকুলি না করা এবং খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে খেতে বলেছেন। পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হবেন না। হাঁচি, কাশি টিস্যুতে দেওয়া এবং সেই টিস্যু পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মেঝে-ঘর, বিছানাপত্র, শরীরের কাপড়-চোপড় সব পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনের বাইরে হাটবাজারে না যাওয়াই উত্তম। আক্রান্ত রোগীদের একটি অংশ হাসপাতালে যাবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয়দের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হবে। মৃত্যু আতঙ্কে ভোগার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ এক কথায় শিক্ষাঙ্গন ও আক্রান্ত এলাকার হাটবাজারও বন্ধ করে দিতে হবে। এমনকি আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা করা সম্ভব। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাঙ্গন বন্ধের পরিবেশ এখনো হয়নি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলে বন্ধ করবেন। তাহলে সমাগম থেকে দূরে থাকার যে সচেতনতা তার কী হবে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুল-ক্যাম্পাস ও হল একদিকে শিক্ষার্থী-স্টাফরা গিজগিজ করছেন। আর পরিবেশ কতটাই বা স্বাস্থ্যকর? সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠা সবার। বন্ধ করলে কী হয়?
করোনা নিয়ে আতঙ্ক না হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০০৩ সালে সারসভাইরাসে আক্রান্ত হয় ২৬টি দেশ। মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ১০ ভাগ। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। ২০০৯ সালে সোয়ানফ্লুতে ৫৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়। মৃত্যুর হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে ইবোলায় মারা যায় ১১ হাজার ৩১০ জন। মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ২৫ ভাগ। আর করোনায় মৃত্যুর হার শতকরা মাত্র ২ ভাগ। শত বছরের বৃদ্ধও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে ৪ বিলিয়ন মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে দুঃসংবাদ ঘোড়ার আগে ছোটে। তাই কোনো আতঙ্ক বা গুজব নয়। সতর্ক ও সচেতন থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে।
ভীষণরকম ছোঁয়াচে করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য- এমনটি ভাবার কোনো কারণই নেই। চিকিৎসকরা আরও বলছেন, যাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিষাক্ত বাতাসের নগরী ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় বিপুলসংখ্যক শিশু অ্যাজমা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা নানা রোগে মানুষ হামেশা আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের এ পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পাশাপাশি মানসিক শক্তি কখনোই হারানো যাবে না। আমরা যুদ্ধজয়ী জাতি। লড়াই আর যুদ্ধে আমাদের রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধেও অদম্য লড়াইয়ে আমরা জয়ী হয়েছি। এ জাতির জীবনে লড়াই একমাত্র পথ। আমরা একসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে কত অসহায় ছিলাম। একেকটি ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের করুণ মৃত্যু দেখেছি। জলোচ্ছ্বাসে মানুষ আর মানুষের কী বীভৎস লাশ আর লাশ। ঘরবাড়ি, গবাদি পশু শেষ হয়েছে। এখন আগাম প্রস্তুতি নিতে পারছি। ক্ষয়ক্ষতির খবর আগের মতো নেই। বন্যা হলেও প্রাণহানি আগের মতো হয় না, পুনর্বাসন কর্মকান্ড দ্রুত হয়েছে। একসময় কলেরার মহামারিতে গ্রামের পর গ্রাম মৃত্যু দেখেছে দেশ। বসন্ত রোগে কী আতঙ্কই না ছিল। এখন এসব মামুলি অসুখ। দুর্ভিক্ষ এখন নির্বাসিত। আমরা ভেজাল খাবারের ভয়াবহতার মুখে জীবনযাপন করছি। এখন অভিযান হচ্ছে। ভেজাল ওষুধ, কসমেটিকস পর্যন্ত ধরা পড়ছে যা মানবদেহের জন্য বিষ। অনেকে ওজন কমাতে যে ভিনেগার খাচ্ছে, তাও ভেজাল ও বিষাক্ত বলে ধরা পড়ছে।
আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার, আড়াই লাখ মা-বোন ধর্ষিত, গোটা দেশ বিধ্বস্ত। আমরা লড়াই করে আগুনে পোড়া ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এসেছি। আমরা লড়তে জানি।
আজকের পৃথিবীতে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, অর্থনীতিতে উন্নত বিত্তশালী ক্ষমতাবান দেশগুলোও করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে বড় অসহায়। অর্থনীতি সামাজিক পরিবেশে এর আঘাত বড় তীব্র। তবু দ্রুত পৃথিবী এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে।
আমাদের মনোবল শক্ত রেখে, সরকারের সঙ্গে জনগণের যুক্ত সচেতনতার প্রচার ও ভূমিকা রেখে, এটাকে রুখতেই হবে। লোকসমাগম, মিছিল, সমাবেশ সাময়িক নিষিদ্ধ ও স্কুল-কলেজ এখন বন্ধ করা উচিত। যে দেশের মানুষ লড়াকু, তার করোনাকে ভয় কীসের? কোথাও কোনো লোকসমাগম নয়, অযথা কোথাও আতঙ্কে হুমড়ি খেয়ে পড়া নয়। ঘরের মেঝে পরিষ্কারের ক্লিনার, টিস্যু, হেক্সেসল, লিকুইড সোপ বা সাবান, হ্যান্ডওয়াশ হাতের কাছে রাখুন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এসব রাখার সামর্থ্য রাখে না। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ কার্যত বস্তির মতো। অ্যাপার্টমেন্টগুলো, বাসাবাড়ি সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত সবখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করা দরকার। বিত্তশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেভাবে মানবিক টানে মানুষের পাশে দাঁড়ায় ঠিক সেভাবে সারা দেশের মানুষের কাছে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিন। এমনকি যার টিস্যু পেপার কেনার সামর্থ্য নেই, লিকুইড সোপ বা সাবান ও মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই, তার কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। একদল যেমন মানবতার পাশে দাঁড়ায়, আরেকদল তেমনি মুনাফা লাভে পাগল হয় বাজারে। মাস্ক থেকে স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে দেয়। অনেকে একাই কিনে ফিলতে চান। সবটাই অপরাধ। এমনটা করবেন না। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নতুন নয়। তবু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের ছুটি বাতিল করে দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সারা দেশে সব সরকারি ও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। জীবাণু গিজগিজ করে। সেসব চিকিৎসা কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে এসব মনিটর করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার করোনায় আক্রান্তদের খবর জানাতে হটলাইন টেলিফোন নম্বর দিয়েছে। গণমাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ মানুষের প্রতি গভীর মমত্ব ও ভালোবাসা নিয়ে যে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে তা আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। বিবেকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ লড়াইয়ে কেউ গুজব ছড়াবেন না। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ঢাকাসহ সারা দেশে এবার মশার সীমাহীন উপদ্রব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোথাও বসা যায় না। কোথাও দাঁড়ানো যায় না। বিমানবন্দর থেকে হাসপাতাল, বাড়িঘর সবখানে মশার কামড়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব পৌরসভায় মশক নিধন অভিযান জোরদার করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকায় আসতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এখানে দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা করা যাবে না।
করোনাভাইরাসের আক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভয়াবহতার হাতছানি সামনে রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা অনেক তিক্ত। করোনাভাইরাস আজকের পৃথিবীর সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর কোথাও এটি নিয়ে কোনো রাজনীতি হচ্ছে না। রাষ্ট্র ও সরকার এবং জনগণের লড়াই করোনার বিরুদ্ধে। আমরা যুদ্ধজয়ী বাংলাদেশের জনগণ। আগেই বলেছি, কত ধরনের লড়াই করে উঠে এসেছি। যদিও নানা কারণে বারবার প্রতারিত, বারবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে বিষাদগ্রস্ত মনে একা নিঃসঙ্গের মতো জীবনযাপন করি। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বটা ইবাদতের মতো পালন করা রক্তের মধ্যে মিশে আছে। করোনাভাইরাসের ভয়ে আমরা আতঙ্কিত হতে পারি না। আমরা নিমতলীর ট্র্যাজেডিসহ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনা দেখেছি। মানুষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মানুষের অপরাধের দায় মানুষ বহন করছে। চীনের মানুষের বাদুড়, কুমির, সাপ, কুকুরসহ নানান খাদ্যাভ্যাস থেকেই এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে বলে বিশ্ববাসী জেনেছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কাছে সব ভাইরাস পরাস্ত। আমাদের দরকার শুধু প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। তা হলে করোনাকে সহজেই ঘায়েল করে আমরা জয়ী হব।
আমাদের দেশের মানুষ যে কোনো বিপদে মানুষের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে বিলম্ব করে না। করোনাভাইরাসের অশুভ আগমনের সংবাদে দেশের গোটা জনগণকে এর বিরুদ্ধে সজাগ সতর্ক ও সচেতন হয়ে লড়াই করার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বরাজনীতির সেই মহান নেতা যিনি তাঁর দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনের ১৩টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। বাকিটা জীবন দুর্ধর্ষ সাহসী নেতা হিসেবে মৃত্যুভয়কে জয় করে স্বাধীনতার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিন্ন শব্দ। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক গৌরবের মাহেন্দ্রক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশ্ববরণ্যে নেতা ও অতিথিদের নিয়ে যে ব্যাপক লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার কথা ছিল মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তা বাতিল করেছেন। বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের খবর জানিয়ে দাও। মুজিববর্ষের কর্মসূচি পরে। আগে দেশের জনগণ।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতাই নন, বিশ্বের শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়েছিলেন। বিশ্বমানবতার বিরল নেতৃত্বের উচ্চতর মর্যাদায় ছিল তাঁর অবস্থান। তিনি এ দেশের জনকই নন, এ দেশের জনগণকে পিতৃহৃদয় দিয়ে তাঁর জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে যেখানে আগে জনগণের স্বার্থ সেখানে মুজিবকন্যার এ সিদ্ধান্ত প্রশংসার। চেয়েছিলাম লিখতে মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নির্লোভ সততার, দেশপ্রেমের শপথ নিতে, চেয়েছিলাম সব চাটুকারিতা মতলববাজির ঊর্ধ্বে উঠে, মুনাফালাভের বিকৃত ধান্ধাবাজি থেকে বেরিয়ে এসে যেন আমরা বঙ্গবন্ধুর গভীর দেশপ্রেম ও সততার আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিজীবনে পালন করার শপথ নিই। চেয়েছিলাম লিখতে গান্ধীর চেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র যেন নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু নিয়ে। যে চলচ্চিত্র বিশ্বের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার পর আমরা নিশ্চয়ই আমাদের হৃদয়, আবেগ-অনুভূতি দিয়ে মুজিববর্ষের মহান আয়োজন ও কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করব। এই সময়ে আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে চাই। ফিনিক্স পাখির মতো আগুনে পুড়ে যে জাতি উঠে আসে, সে জাতির সামনে করোনা কীসের ভয়? করোনায় কোনো ভয় নেই আমাদের। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।