Home > রাজনীতি > হুইপ সামশুল হক দলে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন

হুইপ সামশুল হক দলে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন

বর্তমান সময়ে যে মাদক ও জুয়াবিরোধী অভিযান চলছে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং ’বেফাঁস’ মন্তব্যে করবার মাধ্যমে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী অনেকটা সংকটে পড়েছেন। তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনও এর মধ্যে নতুন সমালোচনার পাত্র বনে গিয়েছেন। এই বাবা-ছেলে কয়েকটি নাটকীয় কাণ্ড ঘটিয়ে তাদের নিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনেকটা তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকি সংসদের এই হুইপকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। এর ফলে তিনি তার দলে অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন।

রাজধানীর পর এবার একযোগে দেশের প্রধান বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও চলছে মাদক ও জুয়াবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগর এলাকার হালিশহরে অবস্থিত আবাহনী ক্লাবে ঝটিকা অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে জুয়ার আলামত হিসেবে বেশ কিছু উপকরন পান। হালিশহরের এই ক্লাবটির মহাসচিব হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নিজেই। ক্লাবে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো নিয়ে তিনি রেগে যান। হুইপ এই ধরণের অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন এবং একই সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দেন।

তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ’আমি এখন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। মাদক ও জূয়ার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে আমার পূর্ন সমর্থন রয়েছে। আমি আমার গনমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে শুধুমাত্র বলেছি, ক্লাবে যদি কেউ তাস খেলে অবসর সময় কাটায় তবে সেটা জুয়া হিসেবে বিবেচিত হয় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও কখনও তাদের ধরতে বলেননি। আমার তখনকার দেয়া বক্তব্যকে একটি মহল ভিন্নভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে আমাকে হেয় করবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হচ্ছেন দিদারুল আলম। দীর্ঘদিন ধরে সামশুলের সঙ্গে দিদারুলের ’দা-কুমড়া’ সম্পর্ক। দিদারুলকে ফোনে ’চড় মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দেন হুইপপুত্র শারুন। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক শারুনের ফোনে এই কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। এরই মধ্যে একে-৪৭ রাইফেল হাতে শারুনের গুলি ছোড়া ও মদের বোতল সামনে নিয়ে তোলা কিছু ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে একপক্ষ আরেকপক্ষকে যখন দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তখন ’চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড ক্লাবের জুয়া থেকে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পাঁচ বছরে আয় ১৮০ কোটি টাকা’- ফেসবুকে এমন একটি স্ট্যাটাস দেন পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল আমিন। এই স্ট্যাটাস দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন হুইপ। পরে সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলমের সঙ্গে ফোনে দুর্ব্যবহার বিষয়ে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন সমকালকে বলেন, ’দিদারুল আলম সাহেব নিজেই আমাকে ফোন করেন। ফোনে কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি আমার বাবা ও পরিবার নিয়ে আপত্তিকর নানা কথা বলে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফেলি।’ অস্ত্রহাতে গুলি ছোড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ’গত বছর রাশিয়ায় বিশ্বকাপের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। আমি শখের বশে সেখানে একটি ক্লাবে এ কাজটি করেছি এবং ফেসবুকেও দিয়েছি। কিন্তু একটি পক্ষ এই ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’

পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে হুইপ সামশুল হক বলেন, ’আমার বিরুদ্ধে ডাহা মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল। এ কারণে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’

অপরদিকে হুইপ সামশুল ও তার ছেলে শারুন চলমান পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তিমত্তারও বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। গত শুক্রবার বিকেলে তাদের শক্তিমত্তা ও প্রভাবের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শোডাউন করেছেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইটে রওনা দেবার পর সেখানে পৌঁছলে বিপুল সংখ্যক অনুসারী নেতাকর্মী তাকে বরণ করতে সেখানে জড়ো হন। কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দর এলাকায় কয়েকশ’ মোটরসাইকেল, বাস-মিনিবাস এবং মাইক্রোবাসসহ সেখানে যান। তাদের গাড়িবহর দিয়ে শোডাউনের জন্য সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। চলমান ইস্যুকে এ ঘটনাটি আরও উস্কে দেয়। সৃষ্টি হয় সমালোচনার।

হুইপ সামশুলের সাথে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের একসময় সুসম্পর্ক ছিল। তাদের দ্বারা সৃষ্ট চলমান ঘটনার পর তাদের মধ্যে সেই ধরনের সম্পর্ক এখন অনেকটাই নেই। মেয়র নাছির বর্তমানে সামশুল হকের সমালোচনায় রীতিমত মুখর। আবাহনী ক্লাবের চেয়ারম্যান হচ্ছেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। ক্লাবটিতে র‍্যাবের অভিযানের পর তিনি অভিযানটির বিপক্ষে না গিয়ে তিনি বরং স্বাগত জানান। চট্টগ্রামের তার যে সকল ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন তারাও বর্তমানে সামশুল হকের কর্মকান্ডের পর এড়িয়ে চলা শুরু করেছেন।