বাংলাদেশ থেকে নিজেদের শাখা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি। এর কারণ হিসেবে এ দেশের অনৈতিক বিপণনব্যবস্থাকে দায়ী করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সানোফির কর্মকর্তারা জানান, এ দেশের বিপণনব্যবস্থা অনৈতিক। ওষুধ কম্পানিগুলোকে তাদের ওষুধ চালানোর জন্য ডাক্তারদের বড় অঙ্কের কমিশন ও উপহারসামগ্রী দিতে হয়। তবেই শুধু তাঁরা রোগীদের ওই কম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। কিন্তু এ ধরনের মার্কেটিং সানোফির বৈশ্বিক নীতি অনুমোদন করে না। অথচ সানোফি যদি এ ধরনের ঘুষ না দেয় তাহলে উদ্ভাবন ও মার্কেটিং কোনোটিতেই ভালো করতে পারবে না।
সানোফি বাংলাদেশের এমডি মুইন উদ্দিন মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেসব দেশে সানোফি কাজ করে সেসব দেশে আমরা নিয়মিতভাবেই আমাদের ক্রেতাদের কিভাবে সর্বোত্তম উপায়ে সেবা দিতে পারি সে বিষয়টি মূল্যায়ন করি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এ মূল্যায়নে ভিন্ন চিত্র উঠে আসছে।’
জানা যায়, সম্প্রতি কম্পানিটির বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুইন উদ্দিন মজুমদার ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা চার্লস বিলার্ড এক চিঠির মাধ্যমে কম্পানির বাংলাদেশ ত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
তবে কম্পানির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ফারহানা তোফায়েল গতকাল রবিবার রাতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অফিস গুটিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এখনো আমাদের জানানো হয়নি। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে কম্পানির কাজের মডেল পরিবর্তিত হয়। সে রকম বাংলাদেশেও কোনো কোনো মডেল পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা চলছে।’
ফরাসি এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে ১৯৫৮ সাল থেকে। সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৫.৩৬ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে পরিচালিত এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বাকি অংশের মালিকানায় রয়েছে সানোফি। এ দেশে তাদের এক হাজার কর্মী রয়েছে। ওষুধ উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে সানোফি, এমন স্বীকৃতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ঢাকার টঙ্গীতে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা রয়েছে।
এদিকে সানোফির বাংলাদেশ ত্যাগের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন এর কর্মীরা। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘আমরা নানাজন থেকে নানা কথা শুনতে পাচ্ছি। ফলে আমাদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমরা অনিশ্চয়তার সময় পার করছি। যদিও কম্পানি জানিয়েছে, কর্মীরা তাদের চাকরি হারাবে না। কিন্তু অন্তরালে সিনিয়র কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে কর্মীদের ক্ষতিপূরণের একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে।’