Home > ধর্ম > হযরত মুহাম্ম’দ (সাঃ) এর দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ একটি স্বপ্ন এবং আমাদের জন্য শিক্ষা

হযরত মুহাম্ম’দ (সাঃ) এর দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ একটি স্বপ্ন এবং আমাদের জন্য শিক্ষা

হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রীতি ছিল এই যে, প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর সাহাবীদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি না বা কারো কিছু জিজ্ঞাসা আছে কি না জানতে চাইতেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে তাকে তিনি যথাযথ পরাম’র্শ দিতেন।একদিন এরূপ জিজ্ঞাসা করার পর কেউ কিছু বলছে না দেখে তিনি নিজেই বলতে আরম্ভ করলেন।

আজ আমি অ’তি সুন্দর ও আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম, দুই ব্যক্তি আমা’র হাত ধরে আমাকে এক পবিত্র স্থানের দিকে নিয়ে চললো। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর অ’পর ব্যক্তি তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানো লোকটির হাতে করাতের মত একখানা অ’স্ত্র আছে। সেই করাত দিয়ে সে বসে থাকা লোকটির মাথা চিরে ফেলছে। একবার মুখের দিক দিয়ে করাত ঢুকিয়ে দিয়ে কে’টে ফেলছে। আবার বিপরীত দিক দিয়েও তদ্রুপ করছে।এক দিক দিয়ে কা’টার পর যখন অ’পর দিক দিয়ে কাটতে যায় তখন আগের দিক জোড়া লেগে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এ অবস্থা দেখে আমি আমা’র সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি ব্যাপার? তারা বললো, সামনে চলুন।কিছুদূর গিয়ে দেখলাম, একজন লোক শুয়ে আছে। অ’পর একজন একখানা ভারী পাথর নিয়ে তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।দাঁড়ানো লোকটি ঐ পাথরের আ’ঘাতে শোয়া লোকটির মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে। পাথরটি সে এত জো’রে মা’রে যে, মাথাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে সে অনেক দূরে গিয়ে ছিট’কে পড়ে। অ’তঃপর লোকটি যে পাথর কুড়িয়ে আনতে যায়, অমনি ভাঙ্গা মাথা জোড়া লেগে ভাল হয়ে যায়। সে ঐ পাথর কুড়িয়ে এনে পুনরায় মাথায় আ’ঘাত করে এবং মাথা আবার চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। এইভাবে ক্রমাগত ভাঙ্গা ও জোড়া লাগার পর্ব চলছে।

এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখে আমি আতংকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপারটা কি আমাকে খুলে বলুন। তারা কোনো জবাব না দিয়ে পুনরায় বললেন, আগে চলুন। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখি, একটি প্রকা’ন্ড গর্ত। গর্তটির মুখ সরু, কিন্তু অভ্যন্তর ভাগ অ’ত্যন্ত গভীর ও প্রশস্ত। এ যেন একটি জ্বলন্ত চুলো, যার ভেতর দাউ দাউ করে আ’গুন জ্বলছে। আর তার ভেতরে বহুসংখ্যক নর-নারী দ’গ্ধীভূত হচ্ছে। আ’গুনের তেজ এত বেশী যেন তাতে ঢেউ খেলছে। ঢেউয়ের সাথে যখন আ’গুন উচু হয়ে ওঠে, তখন ঐ লোকগুলো উথলে গর্তের মুখের কাছে চলে আসে। আবার যেই আ’গুন নীচে নেমে যায়, অমনি তারাও সাথে সাথে নীচে নেমে যায়। আমি আতংকিত হয়ে সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, বন্ধুগণ! এবার আমাকে বলুন ব্যাপারটি কি?কিন্তু এবার তারাও কোনো জবাব না দিয়ে বললেন, আগে চলুন।

আম’রা সামনে এগুতে লাগ*লাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম, একটি র’ক্তের নদী বয়ে চলছে। তীরে একটি লোক দাঁড়িয়ে। তার কাছে স্তুপীকৃত রয়েছে কিছু পাথর। নদীর মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে একটি লোক অ’তি ক’ষ্টে কিনারের দিকে আসার চেষ্টা করছে। কিনারের কাছাকাছি আসামাত্রই তীরবর্তী লোকটি তার দিকে এত জো’রে পাথর ছুঁড়ে মা’রছে যে, সে আবার নদীর মাঝখানে চলে যাচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত তার হাবুডুবু খেতে খেতে কুলে আসার এবং কুল থেকে পাথর মে’রে তাকে মাঝ নদীতে হটিয়ে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এমন নি’র্মম আচরণ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে আমা’র সঙ্গীকে বললামঃ বলুন, এ কি ব্যাপার? কিন্তু এবারও তারা জবাব না দিয়ে বললেন, সামনে চলুন। আম’রা আবার এগুতে লাগ*লাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম একটি সুন্দর সবুজ ‍উদ্যান।উদ্যানের মাঝখানে একটি উঁচু গাছ। তার নীচে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছে।

বৃদ্ধকে বেষ্টন করে বসে আছে বহুসংখ্যক বালক বালিকা। গাছের অ’পর পারে আরো এক ব্যক্তি বসে রয়েছে। তার সামনে আ’গুন জ্বলছে। ঐ লোকটি আ’গুনের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে গাছে উঠালেন। গাছের মাঝখানে গিয়ে দেখলাম একটি মনোরম প্রাসাদ। এত সুন্দর ভবন আমি আর কখনো দেখি নি। ঐ ভবনে বালক বালিকা ও স্ত্রী’ পুরুষ-সকল শ্রেণীর মানুষ বিদ্যমান। সঙ্গীদ্বয় আমাকে আরো উপরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আরো একটি মনোরম গৃহ দেখতে পেলাম। তার ভেতরে দেখলাম শুধু কিছু সংখ্যক যুবক ও বৃদ্ধ উপস্থিত। আমি সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা আমাকে নানা জায়গা ঘুরিয়ে অনেক কিছু দেখালেন।এবার এ সবের র’হস্য আমাকে খুলে বলুন।

সঙ্গীদ্বয় বলতে লাগলেনঃ

প্রথম যে লোকটির মাথা করাত দিয়ে চেরাই করতে দেখলেন, তার মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। সে যে সব মিথ্যা রটাতো, তা সমগ্র সমাজে প্রসিদ্ধ হয়ে যেতো। কিয়ামত পর্যন্ত তার এরূপ শা’স্তি হতে থাকবে। তারপর যার মাথা পাথরের আ’ঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে দেখলেন, সে ছিল একজন মস্ত বড় আলেম। নিজে কুরআন হাদীস শিখেছিল, কিন্তু তা অন্যকে শিখায়নি এবং নিজেও তদনুসারে আমল করে নি। হাশরের দিন পর্যন্ত তার এ রকম শা’স্তি হতে থাকবে।

তারপর যাদেরকে আ’গুনের বদ্ধ চুলায় জ্বলতে দেখলেন তারা ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের এই আযাব চলতে থাকবে।র’ক্তের নদীতে হাবুডুবু খাওয়া লোকটি দুনিয়ায় সুদ ও ঘুষ খেতো এবং এতিম ও বিধবার সম্পদ আত্মসাৎ করতো। গাছের নীচে যে বৃদ্ধকে বালক বালিকা পরিবেষ্টিত দেখলেন, উনি হযরত ইবরাহীম এবং বালক বালিকারা হচ্ছে নাবালক অবস্থায় মৃ’ত ছেলেমেয়ে। আর যাকে আ’গুন জ্বালাতে দেখলেন, তিনি দোযখের দারোগা মালেক। গাছের উপর প্রথম যে ভবনটি দেখেছেন, ওটা সাধারণ ঈ’মানদারদের বেহেশতের বাড়িঘর। আর দ্বিতীয় যে প্রাসাদটি দেখেছেন, তা হচ্ছে ইস’লামের জন্য আত্মত্যাগকারী শহীদদের বাসস্থান।

আর আমি জিবরাঈল এবং আমা’র সংগী ইনি মিকাইল। অ’তঃপর জিবরীল আমাকে বললেন, উপরের দিকে তাকান। আমি ওপরের দিকে তাকিয়ে একখন্ড সাদা মেঘের মত দেখলাম। জিবরীল বললেন, ওটা আপনার বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে ঐ বাড়িতে যেতে দিন। জিবরীল বললেন, এখনো সময় হয় নি। পৃথিবীতে এখনো আপনার আয়ুকাল বাকী’ আছে। দুনিয়ার জীবন শেষ হলে আপনি ওখানে যাবেন।

শিক্ষাঃ

এ হাদীসটিতে রাসূল(সা) কে স্বপ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন অ’প’রাধের পরকালীন শা’স্তির নমুনা দেখানোর বিবরণ রয়েছে। নবীদের স্বপ্ন ওহীর অন্তর্ভুক্ত এবং অকাট্য সত্য। সুতরাং এ শা’স্তির ব্যাপারে আমাদের সুদৃঢ় ঈ’মান রাখা এবং এগু’লিকে স্ম’রণে রেখে এসব অ’প’রাধ থেকে নিবৃত্ত থাকা উচিত। বিশেষতঃ এমন কয়েকটি অ’প’রাধের ওপর এখানে আলোকপাত করা হয়েছে, যা সামাজিক অ’প’রাধের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যা গোটা সমাজকে অন্যায় ও অনাচারের কবলে নিক্ষেপ করে। যেমনঃ মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ ও পরর অর্থ আত্মসাৎ করা এবং ইস’লামের প্রত্যক্ষ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা প্রচারে বিমুখ হওয়া ও সে অনুসারে আমল না করা।

একজন মিথ্যাবাদী যেমন মিথ্যা গুজব, অ’পবাদ ও কুৎসা রটিয়ে জনমতকে বি’ভ্রান্ত, বিপথগামী ও গোটা দেশবাসীকে অন্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্ররোচিত করে থাকে। একজন আলেম তেমনি তার নিষ্ক্রিয়তা ও বদআমলী দ্বারা অন্য যে কোনো খা’রাপ লোকের চেয়ে সমাজকে অধিকতর অ’পকর্মে প্ররোচিত করে থাকে।