Home > শিক্ষা > সেই জিনিয়া হতে চায় ক্রাইম রিপোর্টার

সেই জিনিয়া হতে চায় ক্রাইম রিপোর্টার

বাবার আদর ও ভালোবাসা আর মায়ের শাসনে বেড়ে ওঠা গলাচিপা’র সাহসী মেয়ের নাম ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। পরিবারের তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। স্থানীয় উদয়ন প্রি-ক্যাডেট স্কুল থেকে শুরু হয় তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। এরপর গলাচিপা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী উত্তীর্ণ হয়। তারপর গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি এবং গলাচিপা সরকারি কলেজ থেকে একই বিভাগে এইচএসসি পাশ করে জিনিয়া। এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নে পরিশ্রম করে এগিয়ে যায় সে।

জিনিয়া জানান, ‘বড় দুই ভাই বোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় আমারও স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হব। বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই সিদ্ধান্ত নেই আইন বিভাগে পড়াশোনা করব। কোচিং এ ভর্তি না হয়ে নিজেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। কিন্তু প্রথমবার কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাইনি। বেশ হতাশায় পড়ে যাই। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সুযোগ পাই।’

সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত?’এমন ¯ট্যাটাসের জের ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডেইলি সান পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে দেশব্যাপী প্রতিবাদ, মানববন্ধন, আন্দোলনের চাপে বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন। সমসাময়িক এসব বিষয় নিয়ে আলোচিত ফাতেমা-তুজ -জিনিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর প্রতিনিধি- শাফিউল কায়েস

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি হওয়া উচিত?

জিনিয়া: শিক্ষার্থীদের মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটানো, গবেষণায় আগ্রহী করে তোলা এবং সর্বোপরি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলে দেশের সম্পদে পরিণত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার অভিমত কী?

জিনিয়া: আমার মনে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের ফলে এই আন্দোলন হয়েছে। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত তার বেশির ভাগই এখানে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে একটানা আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই অবস্থার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।

সাময়িক বহিষ্কার করায় শিক্ষার্থী হিসাবে আপনার কোন ক্ষতি হয়েছে কি না?

জিনিয়া: বহিষ্কারের ফলে মিডটার্মের দুটো কোর্সের পরীক্ষা দিতে পারিনি৷ এছাড়া আমার এবং আমার পরিবারের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়তে হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে আপনার মানসিক অবস্থা কেমন?

জিনিয়া: মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত। প্রশাসন ঘটনার শুরু থেকেই আমায় নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। আমি যেহেতু অপরাধ করিনি ক্ষমাও চাইনি। এমনকি আমার হয়ে কাউকে ক্ষমা চাইতেও বলিনি কিন্তু প্রশাসন বলছে আমার হয়ে আমার বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ক্ষমা চাওয়ায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে। ভবিষ্যতে যে একই ভাবে আমায় পুনরায় বহিষ্কার করবে না বা কোনোভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে? ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে খুবই শঙ্কিত।

আপনার বিরুদ্ধে আনীত উপাচার্যের ফেসবুক আইডি ও ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের অভিযোগ কতটা সত্য?

জিনিয়া: সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। উপাচার্যের আইডি হ্যাক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করে আমার কি লাভ? আর তাছাড়া আমি আইনের শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয়ে দক্ষ নই।

পরবর্তীতে সাংবাদিকতা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে আপনি মনে করেন?

জিনিয়া: সাংবাদিকতা সব সময়ই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই ঘটনার পর আমার রিপোর্ট গুলো হয়তো আরে বেশি নজরদারিতে থাকবে।

এমন অবস্থায় পরিবারের সহযোগিতা কতটুকু পাচ্ছেন?

জিনিয়া: পরিবার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

সাংবাদিকতায় কেন আসলেন?

জিনিয়া: সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের চতুর্থ ভিত্তি এবং অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম এ কারণেই সাংবাদিকতা আসা।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় এসে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

জিনিয়া: প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। কোন বিষয়ে রিপোর্ট লিখব বা লিখব না তা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না, দুর্নীতি বা অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করলে শিক্ষা জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা ভবিষ্যতে কি হওয়ার ইচ্ছা?

জিনিয়া: ক্রাইম রিপোর্টার হতে চাই।