ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রস্থ আল্লাহর বাণী হিসেবে পরিচিত কোরান মানুষকে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দেয়। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়দায়িত্ব সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়। মানুষকে আলোর পথে পরিচালিত করে। সর্বোপরি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়া থেকে আখিরাত পর্যন্ত জীবনের দীক্ষা হিসেবে কোরানের শিক্ষা থেকে জীবন পরিচালিত করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
মুসলমানদের বিশ্বাস মতে আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইলের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে মৌখিকভাবে কোরানের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন, দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কোরান অবতীর্ণ হয়। কোরানের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর, যখন মুহম্মদের (সঃ) বয়স ৪০ বছর এবং অবতরণ শেষ হয় মুহম্মদের (সঃ) তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।
ধর্মপ্রাণ আল্লাহর পথের মুসলমানরা প্রতিদিনই কোরান পাঠ করেন। প্রতিদিন কোরান পাঠনের ৬টি প্রয়োজনীয় দিক নিচে তুলে ধরা হলো-
১. কোরান মানবজাতির জন্য হেদায়াত : আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার প্রতিটি বিষয় কোরানে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন : ‘আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ’। সূরা আননাহল : ৮৯
২. কোরান তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে : কোরান তিলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দার ঈমান বৃব্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’। সূরা আনফাল : ২
৩. কোরান মানুষের অন্তরকে প্রশান্তি দেয় : মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’। সূরা আর-রা‘দ : ২৮
৪. কোরান তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে : কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘তোমরা কোরান তিলাওয়াত কর, কারণ, কোরান কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’। মুসলিম : ১৯১০
৫. কোরান হচ্ছে সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। কোরান যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নির্ভুলভাবে প্রমাণিত। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ’। সূরা ইয়াছিন : ১-২
৬. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোরান: প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোরান পড়তে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘সিয়াম ও কোরান কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি।
তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। অনুরূপভাবে কোরান বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে’। মুসনাদে আহমাদ: ৬৬২৬